জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন ডেকে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও উসকে দিয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
আগামী ২৯ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর বনানীতে জিএম কাদেরের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির তোড়জোড় চলছে। ঠিক এমন সময় রওশন এরশাদের শিবির থেকে জাতীয় ছাত্রসমাজের নতুন কমিটি গঠন করে পাল্টা সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম জানান, রবিবার (২০ নভেম্বর) থেকে জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উপলক্ষে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণ শুরু হবে। আগামী ২৯ নভেম্বর সকালে কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ছাত্রসমাজের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার বিকালে রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মো. মামুনুর রশিদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, জাতীয় ছাত্রসমাজের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফকির আল মামুনকে আহ্বায়ক ও আবু সাঈদ লিয়নকে সদস্য সচিব করে ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
শনিবার রওশন এরশাদের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওই কমিটির নেতারা একত্র হন।
রওশন ঘোষিত জাতীয় ছাত্রসমাজের ওই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়করা হচ্ছেন হাফসা সুলতানা, আব্দুস সালাম খান, মো. সোয়াইব ইসলাম, অমিত সিকদার, সোবহান মজিব বিদ্যুৎ, খালিদ হাসান অনিক, ফরহাদ হোসেন, ওয়াজেদ মোল্লা, মো. মোমিন, শামসুজ্জোহা রিপন, সাব্বির হোসেন বেলাল, অপু রায়হান আকাশ, টগর কুমার ঘোষ, নাজমুল হোসেন জিকু, আরব আলী জয়, শওকত আলী, আসাদুজ্জামান টিটু, সম্রাট কাজী , জানেবুর রহমান বিপুল, রুবেল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, আমিনুল ইসলাম ইমন ও শাহ্ দেলোয়ার হোসেন শিপন।
এ বিষয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কাজী মামুনকে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার সেই কবেই বহিষ্কার করেছেন। তার মতো অনেক নেতা দল থেকে বের হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছেন। তারা আলোচনায় থাকতে কত কিছুই করেন। বহিষ্কৃত নেতার কোনো পদক্ষেপই যে বৈধ নয়, সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পার্টির যে দলটি নিবন্ধিত রয়েছে, তা জিএম কাদেরের জাপা, অন্য কোনো বহিষ্কৃত নেতার দল নয়। আমরা আমাদের গঠনতন্ত্রের নিয়মমাফিক জাতীয় ছাত্রসমাজের কাউন্সিল বা কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সব তথ্যই নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি।’
এর আগেও ছাত্রসমাজের দুই গ্রুপ মুখোমুখি হয় ময়মনসিংহে পাল্টাপাল্টি সম্মেলন ডেকে। অবশ্য পরে সেটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্থগিতের কথা জানান রওশন ও জিএম কাদের। এমন উত্তেজনার মধ্যে আবারও তারা মুখোমুখি হয়েছেন দলের ছাত্র সংগঠনটির সম্মেলন নিয়ে।
জাতীয় ছাত্রসমাজ
নব্বইয়ের দশকে ছাত্র আন্দোলনে জেরবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাত্রদের মধ্যে তার অবস্থান তৈরিতে ১৯৮৩ সালের ২৭ মার্চ নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ নামে একটি সংগঠন গড়েছিলেন। পরে নাম বদলে তা হয় জাতীয় ছাত্র সমাজ। সংগঠনটির প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন রফিকুল হক হাফিজ। পরে ১৯৮৪ সালে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সভাপতি এবং শেখ সিরাজুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হন। সে সময় সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাতীয় ছাত্রসমাজ।
ছাত্রসমাজে সে সময় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসাইটে নেতা গোলাম ফারুক অভি, সানাউল্লাহ নিরু, ইকবাল হোসেন রাজু (জাসদ ছাত্রলীগ) নজরুল ইসলাম বাবু (বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য), বিএনপি নেতা ইলিয়াস হোসেনসহ অনেকে ছাত্রসমাজে যোগ দিলে পুরো ক্যাম্পাসে এ ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জাতীয় পার্টির নির্বাচনী রাজনীতিতে ভূমিকা রাখলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জায়গা পায়নি ছাত্রসমাজ।
এরশাদ পতনের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় সব ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজকে ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নেওয়ার পর সেই চিত্র পাল্টাতে থাকে।
২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় ছাত্রসমাজের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে ইব্রাহিম খান জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আল মামুন নির্বাচিত হন।