
সম্পাদক
ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে দলটির উপদেষ্টা পরিষদ। গণতন্ত্রের নামে এখন যেভাবে দেশে গুজব রটানো হচ্ছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগেও একইভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল বলেও জানানো হয় বৈঠকে।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর শুরু হওয়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী ও তৃণমূলের নিবেদিতদের প্রাধান্য দিতে হবে। ত্যাগীদের মনোনয়ন দিলে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারও জয়যুক্ত করবে বলেও মনে করেন তারা।
ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সাথে নিতেও বলেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য।
এ ছাড়া আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে জানিয়ে সেই বিষয়ে দলকে সজাগ থাকার কথাও বলা হয়েছে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে। একই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কূটনৈতিকদের করা মন্তব্যকে অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।
বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আব্দুল খালেক প্রধানমন্ত্রীকে তার নিরাপত্তার বৃদ্ধির বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে বলেছেন। তিনি (আব্দুল খালেক) শেখ হাসিনার নিরাপত্তার বিষয়টি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের বিষয়টি তোলেন। আব্দুল খালেক বলেছেন- এখন গণতন্ত্রের নামে অপপ্রচার হচ্ছে। যদি গণতন্ত্রের নামে এভাবে মিথ্যাচার হতে থাকে তাহলে সেটা বিপজ্জনক। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের আগে দেশে এভাবেই গুজব রটানো হয়েছিল। তখন হককথা নামে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা মিথ্যাচার করা হয়।
‘আজও বলা হচ্ছে দেশে বাকস্বাধীনতা নেই। তখন শুধু একটা টিভি ছিল দেশে এখন অনেক টিভি চ্যানেল। যে যেভাবে ইচ্ছা বলছে। উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা করছে। সরকার কোন টিভি বন্ধ করছে না তারপরও অনেক ধরনের কথা বলা হচ্ছে।
‘বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ টেনে তিনি জানান, ৭৪ সালে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুকে সাবধাণ করেছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেদিন উনার কথা আমলে নেননি। পরে ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে গেল। তাই আপনার (শেখ হাসিনা) নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তা জোরদার করুন। মনে রাখতে হবে অনেকেই চায় না বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, উন্নত হোক। আপনি বাংলাদেশে উন্নয়ন করেন তা অনেকেই চায় না। সেদিনও অনেকে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু যেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে না পারেন। তারা এও চায়, বাংলাদেশে উন্নয়ন না হোক।’
আগামী নির্বাচনে ঐক্যে জোর
উপদেষ্টা পরিষদের ওই সদস্য আরও জানান, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে দলের ত্যাগী ও তৃণমূলের নিবেদিত কর্মীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল খালেক। দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেওয়া হলে মানুষ আওয়ামী লীগ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ক্ষমতায় নিয়ে আনবে। সাধারণ মানুষের কাছে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা সবার চেয়ে ওপরে। দলের সাথে যুক্ত হওয়াদের বিষয়টিকে সামনে এনে তিনি বলেন, এখন অনেকেই আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হচ্ছে। যারা আসছে তারা স্বাভাবিকভাবেই পেছনে থাকবে, দলের জন্য কাজ করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করার পর তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
‘তাদের সামনে নিয়ে আসলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হবেন। এটা দলের জন্য ভালো হবে না। যারা একসময় বঙ্গবন্ধুকে নাম ধরে ডাকতেন, তারা এখন বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে বলতে অস্তির হয়ে যান। এদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। বিএনপির আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে, এ বিষয়েও আওয়ামী লীগকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।’
আগামী নির্বাচনে ঐক্যে জোর
উপদেষ্টা পরিষদের ওই সদস্য আরও জানান, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে দলের ত্যাগী ও তৃণমূলের নিবেদিত কর্মীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল খালেক। দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেওয়া হলে মানুষ আওয়ামী লীগ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে ক্ষমতায় নিয়ে আনবে। সাধারণ মানুষের কাছে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা সবার চেয়ে ওপরে। দলের সাথে যুক্ত হওয়াদের বিষয়টিকে সামনে এনে তিনি বলেন, এখন অনেকেই আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হচ্ছে। যারা আসছে তারা স্বাভাবিকভাবেই পেছনে থাকবে, দলের জন্য কাজ করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করার পর তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।
‘তাদের সামনে নিয়ে আসলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হবেন। এটা দলের জন্য ভালো হবে না। যারা একসময় বঙ্গবন্ধুকে নাম ধরে ডাকতেন, তারা এখন বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে বলতে অস্তির হয়ে যান। এদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। বিএনপির আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে, এ বিষয়েও আওয়ামী লীগকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।’
কূটনৈতিকদের মন্তব্যে ক্ষোভ
বৈঠকে কূটনৈতিকদের সাম্প্রতিক সময়ে করা নির্বাচন নিয়ে মন্তব্যগুলো নিয়েও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উপদেষ্টা পরিষদ বিষয়টিকে দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ‘এই প্রসঙ্গে কূটনৈতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার কথা বলেন অ্যম্বাসেডর জমির। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি দলের কূটনৈতিকদের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করে থাকেন দলের সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে। জমির জানান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তাদের অবহিতও করা হয়। করোনা মহামারির সময় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে তাদের (কূটনৈতিক) এও বলা হয়েছে, দেখো, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশে অনেক কম মৃত্যু হয়েছে। সরকার শিষ্টাচার মেনে চলে, আমরা চাই সবাই শিষ্টাচার মেনে চলুক।’
দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বিষয়ে সতর্কতা
বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে বৈঠকে কথা তোলেন। তিনি জানান শুধু দেশিই নয়, বিদেশী ষড়যন্ত্রও শুরু হয়েছে। বলেন, আমেরিকা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি। স্বাধীনতার সময়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসেঞ্জার বাংলাদেশকে বটমলেস বাক্সেট বলেছিলেন। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক খুব ভালো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে অনেক চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
মানবাধিকার নিয়ে বিএনপির সমালোচনা
বৈঠকে দেশে মানবাধিকার নেই বলে বিএনপি নেতারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের এক উপদেষ্টা ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, ৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক আদালতের নামে যাদের হত্যা করেছিলেন তাদের আপিল করারও সুযোগ দেয়া হয়নি। সে সময় মানবাধিকার কোথায় ছিল বলেও প্রশ্ন তুলে বিএনপির সমালোচনা করেন বৈঠকে। বিষয়গুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরার ওপর জোর দেন তিনি।
বৈঠকে দেশের রিজার্ভ নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি আরেক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান তুলে ধরেন বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত ওই সূত্র। তিনিও সঠিক হিসাবের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে মানুষকে সহজেই জানানোর বিষয়টি তুলে ধরেন।
সবাইকে আশ্বস্ত করেন শেখ হাসিনা
বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, বৈশ্বিক মন্দা হলেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না বলে। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশে যে রিজার্ভ আছে তাতে আরও পাঁচমাস চলতে পারবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে রটানো গুজবের জবাব দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. অনুপম সেন, প্রফেসর ড. মো. হোসেন মনসুরসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা কথা বলেছেন।
সকাল সাড় ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে এটাই উপদেষ্টা পরিষদের শেষ বৈঠক হতে পারে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন।