সম্পাদক
আবদুর রহমান
নিউজ ডেস্ক :
কোনও অঘটন নয়। বিশ্বকাপের শুরুটা ব্রাজিলের মতো করেই করল ব্রাজিল। স্কোরলাইন বলছে খেলার ফল ২-০। দুটি গোলই করেছেন রিচার্লিসন। তবে গোটা ম্যাচে ঠিক কতটা দাপট ব্রাজিল দেখিয়েছে, সেটা এই স্কোরলাইন বলছে না। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে সার্বিয়াকে নিয়ে কীভাবে ছেলেখেলা করছে তারুণ্য আর ক্ষীপ্রতায় ভরা ব্রাজিল দল, সেটাও বলছে না এই স্কোরলাইন। প্রথমার্ধের শুরুটা বাদ দিলে গোটা ম্যাচে একবারের জন্যও সার্বিয়া ব্রাজিলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারল না। সেটাই এই ব্রাজিল দলের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এবারের ব্রাজিল দলকে কেন টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হিসাবে ধরা হচ্ছে, সেটা এদিনই দেখিয়ে দিলেন টিটের ছেলেরা।
বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই বড়সড় অঘটন ঘটে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এদিনের ম্যাচে নামার আগে সেই অঘটনের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছিল ব্রাজিল শিবিরকেও। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে তাই বাড়তি সতর্ক ছিল টিটে ব্রিগেড। ম্যাচের শুরুর দিকে তাই অল-আউট আক্রমণে না গিয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছিলেন কোচ টিটে। দুই উইংয়ে রাফিনহা এবং ভিনিসিয়াসের স্কিল আর গতিকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করছিলেন তিনি। নেইমারকে এদিন অনেকটা নিচ থেকে অপারেট করতে দেখা যায়। কিন্তু কোচ টিটের সেই ধীরে চলো নীতি ব্রাজিলকে খুব একটা সুবিধা করে দিতে পারেনি প্রথমার্ধে। সার্বিয়াকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সমীহ করতে গিয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি তরুণ ব্রাজিলিয়ানরা। তা সত্ত্বেও প্রথমার্ধে অন্তত গোটা তিনেক ভাল সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল ব্রাজিল। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সার্বিয়ার গোলরক্ষক সাভিচ কার্যত বাঘের মতো ভিনিসিয়াসের পায়ে লাফিয়ে পড়ে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে নেন। প্রথমার্ধের শেষদিকে সার্বিয়ার রক্ষণের ভুলে আরও একটি সুযোগ পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো এসে গিয়েছিল ভিনিসিয়াসের কাছে। কিন্তু সেটিও কাজে লাগাতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। মাঝখানে সুযোগ নষ্ট করেন রাফিনহাও। ফলে প্রথমার্ধে গোলমুখ খুলতে পারেনি ব্রাজিল।
সার্বিয়ার রক্ষণ ভাঙতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কৌশল বদল করেন কোচ টিটে। এবার নেইমার, রাফিনহা, ভিনিসিয়াসের ত্রিফলা শুরু থেকেই মার-মার কাট কাট ভঙ্গিতে আক্রমণ শানাতে থাকে। সামনে ছিলেন রিচার্লিসন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে কিছুটা নড়বড়েও দেখাচ্ছিল সার্বিয়ার রক্ষণকে। ম্যাচের বয়স তখন ঘণ্টাখানেক, অ্যালেক্স স্যান্ড্রোর জোরাল দূরপাল্লার শট কার্যত সার্বিয়ার গোলমুখ খুলে ফেলেছিল। কিন্তু এবারে ব্রাজিলের কাল হয়ে দাঁড়ায় বারপোস্ট। তবে গোল পাওয়ার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সাম্বা বয়েজদের। মিনিট দু’য়েকের মধ্যেই রিচার্লিসনের পা থেকে চলে আসে কাঙ্ক্ষিত গোলটি। ডানপ্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াসের জোরাল শট সার্বিয়ার গোলরক্ষক প্রথম ধাক্কায় সেভ করে দিলেও রিবাউন্ড থেকে কার্যত ফাঁকা জালে বল ঠেলে দিতে ভুল করেননি ব্রাজিলের এই তরুণ তারকা।
একবার গোলমুখ খুলে যাওয়ার পর আরও গোল যে আসতে চলেছে সেটা ব্রাজিলের খেলার গতিতেই বোঝা যাচ্ছিল। দ্বিতীয় গোলটিও এল রিচার্লিসনের পা থেকেই। আগের গোলটি তিনি করেছিলেন সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকারের মতো, আর এবারে যে গোলটি তাঁর পা থেকে এল সেটি সত্যিকারের বিশ্বমানের। ডান প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াসের বাড়ানো ক্রস থেকে তিনি যেভাবে বাই-সাইকেল কিকে বল সার্বিয়ার জালে জড়ালেন সেটি সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। শুরুতেই এই গোলটি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল হওয়ার দাবিদার হয়ে থাকল। এরপরও শেষদিকে একাধিকবার গোলের সুযোগ এসেছিল। তবে বারবারই অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে সার্বিয়া। নাহলে আরও অন্তত গোটা তিনেক গোল হতে পারত। রিচার্লিসনের জোড়া গোলই ব্রাজিলকে এদিন প্রত্যাশিত জয় এনে দিল। আর ব্রাজিলের এই জয় বাকি দলগুলিকে বার্তা দিয়ে গেল, এবারে সহজে কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না টিটের দল।