সম্পাদক

আবদুর রহমান

নিউজ ডেস্ক :

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে এগারোটা। দোহায় গনগনে গরমে তেজ দেখাচ্ছে সূর্য। সেই খরতাপকে উপেক্ষা করেই কাতারের রাজধানী দোহার প্রাণকেন্দ্র যাকে বলে, সেই সক ওয়াকিফে ভিড় জমিয়েছেন শ’দুয়েক মানুষ। সমাগমের কারণ যিনি, তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করেছেন ঠিক দু’বছর আগে ২৫ নভেম্বর। তিনি, দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা, ফুটবলের রাজপুত্র।বিশ্বকাপের আসর বসেছে কাতারে। আর সেই কাপ-উৎসবের মাঝেই মারাদোনার দ্বিতীয় প্রয়াণ-বার্ষিকী। শুক্রবার ভরদুপুরে দোহায় মারাদোনার সেই মৃত্যুবার্ষিকীতেই সমবেত হয়েছিলেন ফুটবল অনুরাগীরা। কে ছিলেন না সেই ভিড়ে! ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফান্তিনো থেকে স্মরণসভার আয়োজক আলেজান্দ্রো ডমিনগুয়েজ। আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) হেড ক্লদিও তাপিয়া থেকে সাংবাদিককুল আর অগণন অচেনা মানুষের ঘর্মাক্ত মুখ, যাদের ভালবাসার নাম মারাদোনা। প্রিয় দিয়েগোকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার দুই প্রজন্ম। ’৭৮-এর মারিও কেম্পেস, ড্যানিয়েল বারতোনি, ইউবালদো ফিলোল, জুলিও রিকার্ডো ভিলা, ওমর লারোসা। অন্যদিকে ’৮৬-র জর্জে বুরুচাগা, আলবার্তো টারান্টিনি, সার্জিও বাতিস্তা, রিকার্ডো বুওচিনি, অস্কার রুগেরি, রিকার্ডো গুইসতি, কার্লোস তাপিয়া, হেক্টর এনরিকের মতো মুখ। স্মরণসভায় ছিলেন জুয়ান পাবলো সোরিন, দিয়েগো সিমিওনে, জাভিয়ের জানেত্তি, প্রাক্তন আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকেরম্যানও।স্মরণ নাকি উদযাপন – সেটাকে অবশ্য ধন্দে ফেলে দিয়েছিলেন মারাদোনার একদা সতীর্থ জর্জে ভালদানো। স্বভাবসিদ্ধভাবেই অনুষ্ঠানে বেশ কিছুটা দেরিতেই হাজির হয়েছিলেন ভালদানো।

সেই ব্রাহ্মমুহূর্তকে সাক্ষী রেখেই ঐতিহাসিক ঘোষণা করে গেলেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। জানালেন, এবার থেকে প্রতি বিশ্বকাপে থাকবে মারাদোনা-দিবস। সেইদিন সম্মান জানানো হবে প্রয়াত মারাদোনাকে। ফিফা সভাপতির ঘোষণা, ‘‘পরবর্তী বিশ্বকাপ থেকে একটা দিন নির্দিষ্ট থাকবে, যেদিন আমরা দিয়েগো মারাদোনাকে সেলিব্রেট করব।’’ কর্তব্যের বর্ম খুলে ইনফান্তিনোর গলায় উঠে এল শৈশবের স্মৃতি। বললেন, ‘‘আমি ইতালির মানুষ। ইন্টার সমর্থক। কিন্তু দিয়েগো বরাবর আমাদের হৃদয়ে ছিলেন। আজও থাকেন। দিয়েগো শুধু আর্জেন্টিনার লিডার নয়, গোটা বিশ্বের। তাঁকে সম্মান জানানোর প্রস্তাব যখন এল, সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র ভাবিনি। বিশ্বকাপের সময় এবার থেকে দিয়েগো আমাদের হৃদয় জুড়ে থাকবেন।’’

যেমনটা রয়েছেন প্রাক্তন সতীর্থ ভালদানোর হৃদয় জুড়ে। তিনি বলে গেলেন, ‘‘মারাদোনা একটা প্রতীক। শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। সেই শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা দিতেই ওর বিশ্বকাপে আবির্ভাব ঘটেছিল।’’