
Tanvir Shawon
নিউজ ডেস্ক:
বিদ্যমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাত আগামীতে আরও প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৫৬ শতাংশই যাচ্ছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি ৪৪ শতাংশ যাচ্ছে অন্যান্য দেশে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা প্রকট আকার ধারণ করেছে। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে। ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে বাংলাদেশ থেকেও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি ধরে রাখতে নতুন বাজার সন্ধান করা জরুরি। এশিয়ার মধ্যে জাপান, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নতুন বাজারের সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি তিন মাস পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান কমে গেছে। এ কারণে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তারা পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত দুই প্রান্তিক ধরেই বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে। গত জানুয়ারি মার্চ প্রান্তিকে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১১৫৩ কোটি ডলার। গত এপ্রিল জুন প্রান্তিকে তা কমে ১১১৯ কোটি ডলার হয়। গত জুলাই সেস্টেম্বরে তা আরও কমে ১০২৭ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। আগামী প্রান্তিকে রপ্তানি আরও কমতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রামিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস সংকট, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি, অর্থের প্রবাহ কমানো ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজারগুলো এখন অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত। এ অবস্থায় ওইসব দেশে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব নয়। এখন রপ্তানি বাড়াতে হলে এশিয়ার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। এর মধ্যে জাপান, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কথা বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা এসব দেশে মন্দার আঘাত তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ ছাড়া বিদ্যমান সংকট মোকাবিলার জন্য পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল তুলার ব্যবহার কমিয়ে কৃত্রিমভাবে তন্তু ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে আমদানি খরচ কমবে। ফলে তুলনামূলকভাবে কিছু বেশি মুনাফা হতে পারে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে মোট পোশাক রপ্তানির ১৪ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে, জার্মানিতে ৭ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে সাড়ে ৫ শতাংশ, ফ্রান্সে সাড়ে ১৩ শতাংশ, স্পেনে সাড়ে ৩ শতাংশ, ইতালিতে ৮ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে হচ্ছে ৩০ শতাংশ। এসব দেশই এখন মন্দায় আক্রান্ত। ফলে দেশগুলোতে এখন রপ্তানি কমবে।
সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি। এটি কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আরও চাপ বাড়বে। কেননা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাত রেমিট্যান্সও ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। এদিকে আমদানি কমলেও আগের দেনা পরিশোধের চাপ এখনো রয়েছে।