ষ্টাফ রিপোর্টার:
সাম্প্রতিক ডিসি পোস্টিং নিয়ে প্রশাসনে নানামুখী সমালোচনার ঝড় বইছে। বেশকিছু উল্লেখযোগ্য অভিযোগকে সামনে এনে ডিসি পোস্টিংয়ের পূর্বাপর নানা ঘটনার পোস্টমর্টেম চলছে।
মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন নিয়ে প্রকৃতপক্ষে সরকারপন্থি, পেশাদার এবং একশ্রেণির সুবিধাভোগী রঙ বদলানো আমলাদের মধ্যে চাপা অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমেই চাউর হতে শুরু করেছে।
মোটা দাগে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের তীর প্রশাসনের প্রভাবশালী একটি গ্রুপের দিকে। যারা সব ক্ষেত্রে তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য ধরে রাখতে পছন্দের কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ জেলার ডিসি পদে পোস্টিং কিংবা এক জেলা থেকে অধিকতর বড় জেলায় পদায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। মূলত প্রভাবশালী মহলের চাপে ডিসি পোস্টিং নিয়ে অন্তত এক সপ্তাহ ধরে খসড়া প্রস্তাব ঘষামাজা করা হয়। এর ফলে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এমন কয়েকজন কর্মকর্তার নাম বাদ পড়েছে, যারা একদিকে মেধাবী এবং অপরদিকে সরকারের খুবই আস্থাভাজন। এমনকি শত চেষ্টা করেও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কেউ কেউ তাদের নাম বহাল রাখতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু একটি উদাহরণ দিলেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের উপসচিব শাকিল আহমেদ ২৫তম ব্যাচের একজন মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা। মেধাতালিকায় যার সিরিয়াল-৭। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার পিতা সিরাজ উদদীন আহমেদ একজন ইপিসিএস কর্মকর্তা।
১৯৭৫ সালে তিনি ছিলেন তৎকালীন বরগুনা মহকুমার প্রশাসক (ডিসি)। ওই বছর ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সংবাদ পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেদিন সামরিক সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে তিনি মহকুমায় সামরিক আইন ও কার্ফু জারি করেননি। বরং অস্ত্র হাতে নিয়ে জনগণকে এই হত্যার প্রতিবাদ জানানোর আহবান জানান। সাহসী এই কর্মকর্তা পিএসসির সদস্য হিসেবে সবশেষ চাকরি থেকে অবসর নেন ২০০৩ সালে। বর্তমান সরকার তাকে এ বছর স্বাধীনতা পদক পুরস্কারেও ভূষিত করেছেন। অথচ তার যোগ্য সন্তানকেও এবার ডিসি পদে পোস্টিং দেওয়া সম্ভব হয়নি। সব দিক বিচার-বিশ্লেষণে শাকিল আহমেদ যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তাকে একটি জেলায় নিয়োগ দেওয়ার জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে পারলে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীও কষ্ট পাবেন।’
এ কর্মকর্তা জানান, ‘এভাবে আরও কয়েকজন ভালো কর্মকর্তাকে আমরা ডিসি করতে পারিনি। এছাড়া কর্মরত ডিসিদের মধ্যে যাদের পারফরম্যান্স খুবই ভালো তাদের বড় জেলায় পোস্টিং দেওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ ডিসি হিসাবে যাদের প্রাইজপোস্টিং দেওয়া হয়েছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য নানারকম অভিযোগ রয়েছে। যেসব বিষয়ে সঠিকভাবে তদন্ত হলে তাদের পোস্টিং পাওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক খবর পৌঁছালে তিনি জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবেন না। এ বিশ্বাস আমাদের আছে।’