![](https://bangladeshamar.com/wp-content/litespeed/avatar/2015b80203de6d6ca9789d923179f6a2.jpg?ver=1737370192)
ওমর ফারুক
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নড়াইলে বেদে সম্প্রদায়ের রকমারি পিঠা তৈরির ধুম শুরু হয়। চিতই, রস চিতই, ভাপা, তালপিঠা, পাটিসাপ্টা, কুলিপিঠা, দুধপিঠা, ডিমপিঠাসহ ১২ প্রকারের পিঠা তৈরিতে মেতে ওঠেন সবাই। পিঠা উৎসব ঘিরে নড়াইলের চিত্রা নদীর কোলঘেষা আউড়িয়া ইউনিয়নের সীমাখালী গ্রাম হয়ে ওঠে বর্ণিল। শুক্রবার গ্রামটিতে বেদে সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন’ এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে।
পিঠা উৎসব উপলক্ষে বেদে সম্প্রদায়ের ১৬টি খুপড়ি ঘর রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। পিঠা উৎসবে অংশ নিয়ে আনন্দে উচ্ছ¡সিত হয়ে ওঠেন সম্প্রদায়টির মানুষেরা। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানে আনন্দ বিনোদনে মেতে ওঠে বেদে সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীরা। উৎসবের অতিথিসহ বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন যে যতটা পেরেছেন প্রাণভরে পিঠা খেয়েছেন।
নানা রকমের পিঠা খেয়ে বেদেপল্লীর পাঁচ বছরের শিশু রাহিনূর খুশিতে আটখান। হাসিভরা মুখ নিয়ে জানায়, অনেকদিন পর পিঠা খেয়েছে।
সাথী ও চাঁদনীসহ বেদেপল্লীর আরো কয়েকজন মা জানান, তারা পাঁচ বছর পর পিঠা খেলেন। জীবিকার জন্য দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ঘুরে বেড়াতে হয়। আর তাই সন্তানদের পিঠা-পায়েস বানিয়ে দিতে পারেন না। স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা পিঠা খাওয়ানোয় তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
বেদে সরদার রোকন বলেন, আমরা গরিব-দুঃখী মানুষ। অনেকদিন এমন আনন্দ করে পিঠা খাইনি। এছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাক পেয়েছে। শীত নিবারণের জন্য পেয়েছি কম্বলও।
স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, পিঠা উৎসবের পাশাপাশি ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোরদের মাঝে তাদের পছন্দের পোশাক উপহার দিয়েছি। শীতবস্ত্র ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই বছর ধরে ‘স্বপ্নের পাঠশালা’র মাধ্যমে বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ অর্জন করেছে সংগঠনটি। বেদে সম্প্রদায়সহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আরো সৃজনশীল কাজ করে যেতে চাই।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের মতো আমরা যদি প্রান্তিক ও অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে সমাজে কেউ আর পিছিয়ে থাকবে না। তাদের কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নসহ আনন্দ-বিনোদনের ক্ষেত্রে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এজন্য তারা জাতীয় পর্যায়েও সম্মাননা পেয়েছে। রকমারি পিঠাপুলি তৈরির মধ্যদিয়ে উৎসবে বাঙালির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রতন কুমার হালদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু, আউড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম পলাশ, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ফয়সাল মুস্তারী, সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহ পরানসহ সদস্যরা।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করে নেয়ার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়। সেই থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশু, ভাসমান বেদে সম্প্রদায় ও অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এছাড়া করোনার সময়ে অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বাজার, গরিব কৃষকের ধান কর্তন, চিকিৎসাসেবা, হাসপাতাল ও এতিমখানায় ইফতার বিতরণ, ঈদে ছিন্নমূল এবং বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক উপহার দেয়াসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ বছর সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাদুর্গত এলাকায়ও সংগঠনটি ত্রাণ বিতরণ করেছে। সংগঠনে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন। তাদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।