নিউজ ডেস্ক:
নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ না করায় ১৪টি রাজনৈতিক দলকে শোকজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধিত এসব দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে। এতে তথ্য না দেওয়ার ব্যাখ্যা চাইবে কমিশন। জবাব দেওয়ার জন্য এক মাস সময় দেওয়া হবে। এদিকে বিএনপিসহ চারটি নিবন্ধিত দলকে তথ্য দেওয়ার জন্য এক মাস সময় দেওয়া হবে। দলগুলো ইসির চাহিদামতো তথ্য দিতে সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ ২১টি রাজনৈতিক দল নির্ধারিত সময়েই তথ্য দিয়েছিল। মাঠ পর্যায়ের ওইসব তথ্য সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করছে ইসি সচিবালয়। কমিশনের অনুমোদন পেলে এ কার্যক্রম শুরু হবে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, শোকজ করা হবে এমন দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ তালিকায় আরও আছে-জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কোনো ধরনের তথ্য দেয়নি এবং সময় বাড়ানোরও আবেদন করেনি সেসব দলকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সময় বাড়ানোর আবেদনগুলো মঞ্জুর হয়েছে। এখন তারা সময় পাবে।
জানা গেছে, তথ্য দিতে বাড়তি সময় পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও এনপিপি। এ ছাড়াও নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর আরও দুটি দল তথ্য দিতে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। ওইসব দলের বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের কাছ থেকে নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে গত ১৩ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হয়। তাদের গত ২৪ নভেম্বরের আরপিওর অনুচ্ছেদ ৯০(খ) এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৯-এ উল্লিখিত শর্ত প্রতিপালন সম্পর্কে তথ্য দিতে বলা হয়। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। তাতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করছে কি না তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। কোনো দল নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন না করলে ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২১টি রাজনৈতিক দল ইসিকে তথ্য সরবরাহ করে। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বিএনএফ, মুক্তিজোট, গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), এলডিপিসহ ২১টি দল।
যেসব দল নির্বাচন কমিশনে তথ্য দিয়েছে, তা সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এমনকি মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় কার্যালয় ও কমিটি আছে কি না সেগুলোও দেখা হতে পারে। ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দেওয়া চিঠিতে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসাবে রাখা, বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না সেসব বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলে ওইসব বিষয়েও খতিয়ে দেখা হবে। তারা জানান, শর্ত প্রতিপালন না করলে দলের নিবন্ধন বাতিলের এখতিয়ার আছে ইসির।