স্টাফ রিপোর্টারঃ
কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
কক্সবাজারে আগামী ৭ ডিসেম্বরের জনসভায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। গতকাল বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল স্টেডিয়ামে প্রধান মন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানানো হয়। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ মুজিবুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে ২০১৭ সালের ৬ই মে উক্ত স্থানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেছিলেন। উক্ত ভাষণে তিনি কক্সবাজারকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়নসহ ব্যাপক মেঘা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। মেঘা প্রকল্পের বিভিন্ন প্রকল্প ইতিমধ্যে দৃশ্যমান এবং দ্রুত উক্ত মেঘা প্রকল্প সমূহ উৎপাদানে যেতে সক্ষম হবে। বাস্তবায়নাধীন মেঘা প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর, কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেল লাইন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ীর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, মেডিকেল কলেজ, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ফুটবল স্টেডিয়াম, বিকেএসপি, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ হাসিনা নৌ ঘাটি, হাই-টেক পার্ক, জাতীয় সমুদ্র গবেষনা ইনন্সিটিটিউট, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ প্রায় ৪০টি বড় ধরনের উন্নয়ন মেঘা প্রকল্পের সুফল দ্রুত কক্সবাজারবাসীসহ দেশবাসী ভোগ করতে পারবেন।
আরও উল্লেখ করে বলা হয়, অনেক সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা, মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় আজ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এবং বাঙালী জাতি সম্মানের আসনে অধিষ্টিত। সারা দেশে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন দেশবাসীর জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এ এগিয়ে যাওয়া বিএনপি-জামাতসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের পছন্দ নয়। তাই তারা দেশের এগিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়নের গতি ব্যাহত করার কুমানসে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অরাজগতা সৃষ্টি করে দেশের শান্ত পরিস্থিতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যেকোন উপায়ে ক্ষমতা দখল করে লুটপাট, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস করে এবং হাওয়া ভবনের মত আরেকটি ভবন সৃষ্টি করে পাকিস্তানী ভাবধারায় অনুন্নত ও অস্থিতিশীল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস দুর্নীতিবাজ, ফেরারী আসামী তারেক জিয়া ও সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার এই নীল নকশা কখনো সফল হবে না এবং বাঙালী জাতি কখনো তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার অধিকার দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীকে তাদের প্রত্যাশার চাইতেও বেশি উন্নয়ন দিয়েছেন। কক্সবাজারকে অপরূপ সৌন্দর্য্যের রাণী হিসেবে তিনি গড়তে চান। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা যাতে কক্সবাজার এসে ভ্রমণ করতে পারেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেই কাজ করার জন্য তিনি কক্সবাজার পৌরসভা সহ বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কক্সবাজার নিয়ে তার সুদর প্রসারী স্বপ্ন রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও কক্সবাজারকে খুব বেশি পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন কক্সবাজারবাসীকে। তাই এত উন্নয়নের পরেও কক্সবাজারবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আরো কিছু প্রত্যাশা করেন। এরমধ্যে কক্সবাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সংযুক্তিকরণ, কক্সবাজারের সাথে মহেশখালী উপজেলার সংযোগ সেতু ও বার্থকালী নদীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, কুতুবদিয়া মগনামার মধ্যে ফেরি সার্ভিস চালুকরণ, কক্সবাজার পর্যটন গবেষনা ইনস্টিটিউট, চার লেনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক, ছয় লেনের কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহসড়ক, কক্সবাজার সিটি কর্পোরেশন, কক্সবাজার সিটি কলেজকে সরকারিকরণসহ অনেক প্রকল্প।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ওই সকাল থেকে লোকজ সংস্কৃতির অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইন্জিঃ মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, এতো বড় বড় মেগা প্রকল্পের কথা কখনো কেউ সাহস করেনি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা করে দেখিয়েছেন। তিনি পর্যটন শহর কক্সবাজারের হোটেলের মান নিয়ে বলেন, পাঁচ শতাধিক হোটেলের মধ্যে মাত্র তিনটিতেই সেন্ট্রাল এসটিপি আছে। এই ব্যবস্থা না থাকার কারণে বর্জ্য বাকঁখালী নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। যার কারনে পানি ও পরিবেশ দুটিই দূষিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নামি-দামি হোটেল করেছেন কিন্তু বর্জ্য নিষ্কাষনের ব্যবস্থা নেই। তিনি সেন্টমার্টিনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এতো সুন্দর একটি স্থান দেখলে মালদ্বীপের মতো দেখায়। এটি সরকারের আমলে নেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইন্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, প্রধান মন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব সাখাওয়াত মুন ও হাসান জাহিদ তুষার, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জাফর আলম ও আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আঃলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা সহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ।