নিউজ ডেস্ক:

চলমান সংকট মোকাবিলায় অপচয় বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কাজে আসছে না। বারবার এমন নির্দেশ দেওয়া হলেও সেটি মানছে না খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ই। চত্বরজুড়েই চলছে অপচয়ের মহোৎসব।

ভালো ভবন ভেঙে সংস্কার, পুনঃসংস্কার, সিঁড়ি অপসারণ, এমনকি নতুন করে ডেকেরোশেনও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের চারদিকে ওয়ালে ছবি লাগানোর নামে খরচ হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

পাশাপাশি এলইডি স্ক্রিন চালু রাখতে ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ। এরই মধ্যে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে আরও একটি ভাঙচুর ও শোভাবর্ধনের প্রকল্পও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কাজ করার অনেক সময় আছে। কিন্তু এই ঘোর সংকটময় সময় কেন এসব করতে হবে সেটিই বড় প্রশ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংকটের মধ্যেও সংস্কার করা হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তর। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সেটির ওপর পানি পড়ে সিলিং নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এটি সংস্কারের বিকল্প ছিল না। কিন্তু মন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে লাগোয়া কর্মচারীদের জন্য কমনরুমটিতে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি অতিথিদের জন্য বসা এবং মিটিং করার রুম। এক্ষেত্রে ভেতরের ওয়াল ভেঙে সম্পূর্ণ নতুন ডেকোরেশন এবং উন্নত ফার্নিচারে সজ্জিত করা হচ্ছে রুমটি। লাগানো হয়েছে ঝাড়বাতিও। আশপাশের আরও কিছু কক্ষও সংস্কারের কথা আছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বিষয়টি সে রকম নয়। আমার অফিস কক্ষটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়েছিল। তাই এটির সংস্কার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া পাশের রুমটি বিদেশিদের বসার জন্য করা হয়নি। সেখানে আমার খাওয়া ও রেস্ট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেননা এতদিন খেতে হয়েছিল টয়লেটের দরজার সঙ্গেই বসে। সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় বলেই স্থান পরিবর্তন করেছি। এছাড়া ওই কক্ষে তারা (যারা সংস্কার করেছে) কী করেছে না করেছে আমি সেটি দেখিনি। অর্ডার দেওয়ার পর মন্ত্রী হিসাবে দেখা সম্ভবও হয়নি। ফলে ঝাড়বাতিসহ একটু জাঁকজমক করে ফেলেছে।

এদিকে নতুন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর তৈরির সময় দপ্তরের বারান্দায় অবস্থিত সিঁড়ি অপসারণ করা হয়। এটি নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, যখন আমার বসার জায়গা তৈরি হচ্ছিল তখন দেশে এত সংকট ছিল না। কিংবা প্রধানমন্ত্রী অপচয় বন্ধের কোনো নির্দেশনাও দেননি। এছাড়া আমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছি। কোথায় বসে অফিস করব না করব তার ব্যবস্থা সচিব মহোদয়ই করেছেন। আমি অফিস ডেকোরেশন বা সিঁড়ি অপসারণের বিষয়ে কোনো কথাই বলিনি। এটা আমার বিষয় নয়।

এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসেই সংস্কার করা হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (সিইডি) সদস্যের (সচিব) দপ্তরটি। জুলাই মাসে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েও কয়েকদিন সেখানে অফিস করেন সাবেক সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সে সময়ও সংস্কার কাজ চলমান ছিল। এর প্রায় ৪ মাস পরই নতুন করে জিইডির সদস্য হিসাবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কাউসার আহাম্মদ। তিনি আসার পর সম্পূর্ণ সংস্কার করা দপ্তরটিকে আবারও সংস্কার করা হয়। এক্ষেত্রে ভেতরের ডেকোরেশনের পাশাপাশি একটি ওয়াল ভেঙে বড় করা হয়েছে কক্ষটি। চরম সংকটময় মুহূর্তে কৃচ্ছ সাধনের কঠোর নির্দেশনার পরও কেন এ রকম সংস্কারের প্রয়োজন হলো এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে চত্বরজুড়েই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউসার আহাম্মদ বলেন, আমার রুমে টয়লেট ছিল। ফলে দুর্গন্ধ আসত। এ কারণে টয়লেটটি এখন বাইরের দিকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রুমের বুকশেলফসহ অনেক স্থানে উইপোকা ধরেছিল। ফলে পিডব্লিউডিকে বলার পর তাদের পরামর্শেই এসব সংস্কার কাজ করা হয়েছে। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাস আগেই সংস্কার করা হয়েছিল কক্ষটি, তাহলে এখন কেন প্রয়োজন হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়টি আমি জানি না। তবে উইপোকা তো আর বসে থাকে না। এখনো কোথাও কোথাও উইপোকার ঢিবি আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব কাজের উদ্যোগ নেওয়া ছিল কৃচ্ছ সাধনের অনেক আগেই। কিন্তু কাজটা হয়তো ওই সময় হয়েছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে কার্যক্রম বিভাগের প্রধানের অফিস লাগোয়া সম্মেলন কক্ষও সংস্কার করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ ভালো অবস্থায় থাকলেও নতুন করে পুরো ডেকোরেশন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বিদেশি অনুদানের টাকায় এই সংস্কার কাজ চলছে।

এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চারদিকের ওয়ালের সঙ্গে ৮ ফুট বাই ৮ ফুটের ১৪৭টি ছবি লাগানো আছে। এই সংকটময় মুহূর্তেও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করা হচ্ছে এসব ছবি। উন্নয়ন প্রকল্পের ছবির পাশাপাশি জাতীয় দিবসকেন্দ্রিক পরিবর্তন করা হয় ছবিগুলো। এগুলোর পেছনে মাসে লাখ লাখ টাকার বিল দিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই সময়ে ছবিগুলো বদলানো-কমানো যেত। তাহলে বিলও কম আসত। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্থানে ৮ ফুট বাই ১২ ফিটের ১২টি এলইডি টিভি লাগানো হয়েছে। এগুলোতে সময়-অসময়ে চলছে প্রচার কার্যক্রম। বিদ্যুতের চরম সংকটময় সময়েও এগুলো চলমান থাকছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাঙচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ছবি এবং এলইডি স্ক্রিন চালানোর বিষয়টি আমি দেখব। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি প্রকল্প পরিচালককে অপ্রয়োজনে এলইডি টিভি বন্ধের নির্দেশ দেন।

এদিকে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই ‘ভাঙচুর ও শোভাবর্ধনের জন্য প্রকল্প’ নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ক্যাম্পাসের ভবনগুলোর স্থাপনাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে অনেক ভবন সংস্কার হয় না। সেসব কারণে কর্মকর্তাদের অফিস করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। সেই সঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলছে। সবকিছুই করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। এ রকম প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে।