নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রামে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও মিলছে না চিনি। পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে বেড়েছে চিনির দাম। নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা অতিরিক্ত দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে লাগামহীনভাবে দাম বাড়ছে চাল ও পেঁয়াজের। প্রতিকেজি মোটা চালও এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। চালের ভরা মৌসুম হলেও দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি।
নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে চিনির দাম। খুচরা পর্যায়ে ১১৮ টাকার বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। গত ১৭ নভেম্বর সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেই কেজিতে ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্যাকেট চিনির দাম ১০৮ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। পাশাপাশি নতুন দর অনুযায়ী প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম পড়বে ১০২ টাকা। অথচ খুচরা দোকানগুলোতে প্যাকেট চিনি ১১০ থেকে ১১২ টাকা ও খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত চিনির আমদানি মূল্য প্রতিটন ৫৫০ ইউএস ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৭ হাজার ৭৫০ টাকা (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা হিসাবে)। এ হিসাবে প্রতিকেজি চিনির আমদানি মূল্য ৫৭ দশমিক ৭৫ টাকা। বন্দরে কাস্টমস ডিউটি (সিডি কর) দিতে হয় ৬ হাজার টাকা, রেগুলার ডিউটি (আরডি) ৩০ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ, এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) ৫ শতাংশ এবং সমন্বয় কর (এটি) ৫ শতাংশ দিতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতিকেজি পরিশোধিত চিনিতে ৪০ টাকার মতো বিভিন্ন শুল্ক দিতে হয়। আবার অপরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে বিভিন্ন কর দিতে হয় ৩৩ টাকার মতো। এ হিসাবে প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ে ১০০ টাকার মতো। আমদানিকারক প্রতিমণ চিনি বিক্রি করছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৯৫০ টাকা দরে। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা ১০৬ টাকার বেশি দরে। আমদানিকারকরা প্রতিকেজি চিনিতে মুনাফা করছেন ৬ টাকা। এই চিনি খুচরা বাজারে মুদি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা কেজি দরে। হাতবদলের পর প্রতিকেজি চিনিতে মুনাফা করছেন ১০ থেকে ১২ টাকা।
খুচরা চিনি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চিনির আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি ও আমদানি খরচ বাড়ার অজুহাতে চিনির দাম লাগামহীনভাবে বাড়ানো হচ্ছে।
সরকার বিদেশ থেকে জিটুজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করলেও চালের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু মিলার সামনে আরও দাম বাড়বে এমন আশায় চাল মজুত করছে। ফলে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মিল মালিকরা চালের সরবরাহ একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে চালের আড়তের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর কাছেও বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মিলারদের যোগসাজশে তারাও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না। খুুচরা বাজারে আগের মতোই চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮০, মোটা চাল ৬০, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫, কাটারি আতপ ৭৮ থেকে ৮২ ও চিনিগুড়া ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবার দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক আমদানিকারক এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছেন না। আগের খোলা এলসির পেঁয়াজ এখন আসছে। ফলে পাইকারিতেও পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ছে। খাতুনগঞ্জে ভারতীয় ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে ঠিকমতো এলসি খুলতে না পারার কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ডলারের দাম স্বাভাবিক হলে পেঁয়াজের দামও কমে আসবে। এখন সাময়িকভাবে দাম বাড়ছে।’