স্টাফ রিপোর্টার,
বগুড়ায় ভুট্টা চাষে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন
বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় উত্তরের জেলা বগুড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভুট্টা চাষ। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জমিতে চাষের উপযুক্ত করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ভুট্টার ভালো ফলন আশা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

রবি মৌসুমে কৃষকরা অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে বেশি ঝুকছে। সব ধরনের জমিতে আগে শোভা পেত কাউন, তিশি, মরিচ, কচুসহ অন্যান্য আবাদ। এখন এসব আবাদ ছেড়ে দিয়ে কৃষক ভুট্টা চাষে উৎসাহী হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের মতে, বগুড়ায় এবারও ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। জেলায় এবার খরিপ মৌসুমে মোট ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে এবং এ আবাদ চলমান রয়েছে। যেখানে গতবার রবি মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

প্রতি হেক্টরে খরচ হবে ৮০ হাজার টাকা করে। তবে ভুট্টার ফলন প্রতি হেক্টর জমিতে ৮.৬ মেট্রিক টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারি ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমে ভুট্টা লাগাতে বেশ ব্যস্ত। দেশে বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টার মধ্যে রয়েছে এন এইচ-৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০, এম গোল্ড-৯০০ ইত্যাদি রবি ও খরিপ মৌসুমি ভুট্টা।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি এলাকার কৃষক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৬ বিঘা জমিতে এন এইচ-৭৭২০ উচ্চ ফলন শীল জাতের ভুট্টা আবাদ করছি। বর্তমানে ভূট্টার খেতে সেচ দিচ্ছি এবং কীটনাশক স্প্রে করছি। কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে লাভবান হবো এমনটি আশা করছি।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার কৃষক মোঃ মনসুর আলী বলেন, ৩ একর জমিতে এন এইচ-৭৭২০ উচ্চ ফলন শীল জাতের ভুট্টা আবাদ করছি। প্রতি বিঘায় ৮ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। এখন ক্ষেতে পানি দেয়া ও পরিচর্যায় ব্যস্ত আছি। ভুট্টা ক্ষেত বেশ ভাল হয়েছে, বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ভালো ফলন আশা করছি।

বগুড়ার মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের অনূকুলে থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিনদিন বেড়ে চলছে। গমের তুলনায় ভুট্টা ও মরিচের দামও ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসল দুটি চাষের দিকে ঝুকছে কৃষক।

দেশে আমিষের চাহিদা বেশি থাকায় বগুড়াসহ উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় হাঁস-মুরগি ও গবাদী পশুর খামার। বৃহৎ কোম্পানীগুলো ছাড়াও স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা এসব খামারের প্রধান খাদ্য হল ফিড। এরই পরিপেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ফিড মিল। আর এই সকল মিলের প্রধান কাঁচামাল হলো ভূট্টা। এসব ফিড মিলগুলো সারাবছর প্রচুর পরিমাণে ফিড তৈরির কাঁচামাল ভূট্টা ক্রয় করে থাকে।

এছাড়াও গম ও ভুট্টা থেকে আটা, ময়দা, বিস্কুট, পাউরুটি প্রভূতি খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়। এর ফলেও দেশিয় বাজারে ভুট্টার বেশ চাহিদা আছে। এজন্যই কৃষক এ ফসলটি চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এনামুল হক জানান, ভুট্টার আয়ুকাল ১১০-১৩০ দিন হওয়ায় এবং ফলন ও চাহিদা থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিনদিন বাড়ছে। এছাড়াও বগুড়ার কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষে প্রশিক্ষণ ও সরকারীভাবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।