নিউজ ডেস্ক :
কোনো শিল্পী কি রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক বাস্তব বদলে দিতে পারেন? সেনেগালের এক শিল্পী আফ্রিকার একাংশের জন্য অভিন্ন মুদ্রা ও বিশ্ববাসীর জন্য অবাধ ভ্রমণের স্বপ্নকে বাস্তব করে তোলার লক্ষ্যে অভিনব উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
আফ্রিকাকে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার থেকে মুক্ত করাই মনসুর সিসের স্বপ্ন৷ নিজের সৃষ্টি করা মুদ্রা ‘আফ্রো’-র সাহায্যে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চান তিনি৷ সেনেগালের শিল্পী সিস সেই প্রকল্পের মাধ্যমে আফ্রিকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজের ইউটোপিয়ান দাবি তুলে ধরছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আফ্রো আসলে আফ্রিকার এক শৈল্পিক মুদ্রা৷ আফ্রিকার যে ১৪টি দেশ ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিলো, সেগুলির জন্যই এই মুদ্রার কথা ভাবা হয়েছে৷ আজও সেখানে ফ্রান্সে তৈরি মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে৷ সেই মুদ্রার নাম ‘আফ্রিকায় ফরাসি কলোনিগুলির কারেন্সি’৷ আমি সেটা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম৷ আফ্রোই হলো ভবিষ্যৎ৷”
২০ বছর ধরে মনসুর আফ্রো প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন৷ কত যে নোট ছেপেছেন, সেটা আর তাঁর মনে নেই৷ প্রত্যেকটি আফ্রোর নোট শিল্পের নিদর্শন৷ একই সঙ্গে তিনি নিজের মুদ্রার মাধ্যমে শিল্পের সীমানাও ভেঙে দিতে চান৷ মাল্টিমিডিয়া শিল্পী হিসেবে মনসুর সিস জানান, ‘‘দাকার শহর জুড়ে আমরা এক্সচেঞ্জ কাউন্টার খুলেছি৷ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে বিপুল সাড়া পাচ্ছি৷ মানুষ এটিকে সত্যি প্রচলিত মুদ্রা ভাবায় বরং আমাদের প্রায় একটা সমস্যা হতে যাচ্ছিল৷ কিন্তু স্বীকৃত রাজনীতিকদের কাঁধেই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব রয়েছে৷ আমার টাকাও ডলারের মতো কাগজ দিয়ে তৈরি৷ আফ্রো কাগজ দিয়ে তৈরি, তবে এখনো স্বীকৃতি পায় নি৷”
১৯৯৩ সালে মনসুর সিস যখন দাকার থেকে জার্মানির রাজধানীতে বাস করতে এসেছিলেন, সে সময়ে তিনি পরিচয় ও ঐতিহ্যের মতো বিষয় নিয়ে চর্চা করছিলেন৷ তাতে হাস্যরসের ছোঁয়াও ছিল৷ বার্লিন শুধু তাঁর কাজকে আরও জোরালো ও রাজনৈতিক করে তুলেছিল৷
১৮৮৪ ও ১৮৮৫ সালে সেখানে তথাকথিত ‘বার্লিন কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সেখানে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের বিভাজন স্থির করেছিল৷ বলা বাহুল্য, আফ্রিকানদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি৷ মনসুর বলেন, ‘‘এটা সত্যি অকল্পনীয়৷ বার্লিনের কঙ্গো কনফারেন্স আমাদের পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বের চর্চা করতে এক ধরনের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা জুগিয়েছিল৷ আমরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে বাস করতে পারি, কীভাবে এই উপনিবেশবাদ থেকে নিজেদের মুক্তি দিতে পারি?”
২০০০ সালে মনসুর আরও দুই শিল্পীর সঙ্গে মিলে ‘ল্যাবোরেটরি অফ ডিবার্লিনিফিকেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেই থিংক ট্যাংক থেকে শুধু অভিন্ন মুদ্রা ‘আফ্রো’ নয়, ‘গ্লোবাল পাসপোর্ট’ নামের এক আইডিয়াও উঠে এসেছে৷ সেই পাসপোর্টের সাহায্যে সব মানুষের জন্য মুক্ত ও অবাধ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে৷ এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে মনসুর সিস বলেন, ‘‘আইভরি কোস্ট বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোকো উৎপাদনকারী দেশ৷ সব জায়গায় কোকো রপ্তানি করা হয়৷ গোটা বিশ্বে চকোলেট পাওয়া যায়, অথচ কোকো চাষির ভ্রমণের অধিকার নেই৷ এমনটা কেন হবে? আমার গ্লোবাল পাসপোর্ট ছোট চাষিদের বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে৷”
নিজের শিল্পের সাহায্যে মনসুর সিস অন্যায় তুলে ধরতে এবং মুক্ত ও স্বাধীনচেতা আফ্রিকার স্বপ্ন আরও জোরদার করতে চান৷ আজ সেটা ইউটোপিয়া বা স্বপ্নলোক মনে হলেও কোনো এক সময়ে বাস্তব হয়ে উঠবে বলে তাঁর মনে আশা রয়েছে৷ খবর:ডিডব্লিউ