স্টাফ রিপোর্টার:
কিশোরগঞ্জে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসাবর্জ্য সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এতে চিকিৎসা বর্জ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জীবাণুমুক্ত হওয়ার আগেই এসব চিকিৎসাবর্জ্য চলে যাচ্ছে নদ-নদীতে, ঝুঁকিতে মানুষ শব্দদূ বর্জ্যের ভাগাড়ে। আর পরিশোধন ছাড়াই নালানর্দমা হয়ে তরল বর্জ্য গিয়ে মিশছে বিভিন্ন নদ-নদীতে। বর্জ্যের এমন অব্যবস্থাপনার কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্য থেকে হেপাটাইটিস বি ও সি, নানা ধরনের চর্মরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহসহ অনেক রোগ ছড়াতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানান, চিকিৎসাব্যবস্থার পরিসর অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ চিকিৎসাবর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্যে র বেশির ভাগই কমবেশি সংক্রামক, এগুলোর মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। চিকিৎসাবর্জ্যকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্যসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। নইলে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যকর হবে না। জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসাবর্জ্য আলাদা করে ফেলা র কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সাধারণ বর্জ্যের মতো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের বর্জ্যও ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপন্ন ৯০ শতাংশ বর্জ্যই এভাবে রাস্তার পাশের খোলা ডাস্টবিন, নর্দমা কিংবা সংলগ্ন নদনদীতে ফেলা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে, রক্ত-পুঁজমিশ্রিত তুলা ও গজ ব্যান্ডেজ, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, সুচ, রক্তের ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, এমনকি মানুষের দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন সংক্রমিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আলাদা করে চিকিৎসাবর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা থাকলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে তা ফেলে দেয়। টোকাই ফেরিওয়ালারা এসব চিকিৎসাবর্জ্য সংগ্রহ করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দেয়। চিকিৎসাবর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, এসব সংক্রামক বর্জ্য বিনষ্ট করতে হবে। তবে আইন থাকলেও তদারকির অভাবে এর বাস্তবায়ন নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশো রগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ বলেন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যদি চিকিৎসাবর্জ্য সঠিক উপায়ে নষ্ট না করে তবে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিধিমালা অনুযায়ী মোবাইল কোর্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসাবর্জ্য আমার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়ে আসে। জানুয়ারি মাসে আমাদের ডাম্পিং ব্যবস্থা চালুহয়ে গেলে চিকিৎসাবর্জ্য আমরা নিয়ে আসব। ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাবর্জ্য ধ্বংস করে ক্লিনিক অ্যাসোসিয়েশন। সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম বলেন, যার যার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তারা তাদের চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করবে। কোনো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় বর্জ্য ধ্বংস না করে তবে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।