অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত রাজশাহীর বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে। দ্বন্দ্বের মধ্যেই আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলটির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তবে দ্বন্দ্বের মধ্যেই তারা সমাবেশ সফল করতে যার যার জায়গা থেকে কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মামুন অভিযোগ তুলেছেন—গণসমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেসব কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বড় নেতারা নিজেদের সমর্থকদের জায়গা করে দিচ্ছেন। এ নিয়ে আবারও ‘মাই ম্যান’ বিষয়টি সামনে এসেছে। এ বিষয়ে গত ১১ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর কাছে অভিযোগ দেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলার প্রতিটি আসনে শক্ত অবস্থানে ছিল বিএনপি। বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল রাজশাহী। এখন স্থানীয় নেতারা মঞ্চ দখলের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির চিত্রও এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত জানুয়ারি পুঠিয়া উপজেলায় আয়োজিত জেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেখানে রাজশাহী মহানগর কমিটির সাবেক এক সিনিয়র নেতার সমর্থকরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি ও স্যান্ডেল ছোড়াছুড়িতে দাঁড়ায়। রিজভী বারবার অনুরোধ করেও তাদের থামাতে পারেননি। এরপর মার্চ মাসে নগর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের মঞ্চে যুবদলের এক নেতার নাম ঘোষণা করতে দেরি হয়। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে সভাস্থলের সামনে যুবদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ডিসেম্বর নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একাংশের নাম ঘোষণার পর স্থানীয় পিএনপির একটি অংশ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে। লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, নতুন কমিটির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বিএনপির কেউ নন। ওই কমিটির সদস্য মো. মামুন অর রশিদকে একজন মাদকসেবী, চাঁদাবাজ ও আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ এই নেতাদের নাম কমিটিতে আসার আগ পর্যন্ত তারা দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, অভিযোগকারীদের সাথে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আসছিলেন। বহু বছর থেকেই রাজশাহীতে তারা বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত।
২০১৬ সাল পর্যন্ত জেলা বিএনপিতে নাদিম মোস্তফা আর মহানগর বিএনপিতে মিজানুর রহমান মিনুর আধিপত্য ছিল। এই সময় পর্যন্ত রাজশাহী বিএনপিতে এ দুই নেতারই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য ছিল। পরে সেই দ্বন্দ্বের ডালপালা গজিয়েছে। একসময় মিনু বা নাদিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতরাই এখন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রভাবশালী এ দুই নেতার নেতৃত্বে দলে কলহ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে।
মিনু ও নাদিমের বলয় ভাঙতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে কেন্দ্রে নালিশ দেন। ফলে এ দুই নেতাকে সরিয়ে মহানগর ও জেলায় ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তাতে দ্বন্দ্ব আরও বিস্তৃত হয়।
তবে একে দ্বন্দ্ব না বলে প্রতিযোগিতা বলে দাবি করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
তিনি জানান, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে প্রতিযোগিতা থাকবে। আর আসন্ন বিভাগীয় গণসমাবেশের সাথে তারেক জিয়া সম্পৃক্ত। তাই এ কর্মসূচি সফল করতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। রাজশাহীর সমাবেশ হবে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সমাবেশ।