নিউজ ডেস্ক:
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর কাল (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ’র (স্বাচিপ) সম্মেলন।
১৫ হাজারের বেশি চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত এ পেশাজীবী সংগঠনটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মুখর এখন চিকিৎসা অঙ্গন।
আগামীতে সংগঠনের হাল ধরছেন কারা-এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। শেষ মুহূর্তে চলছে নানা তৎপরতা। বিশেষ করে সভাপতি ও মহাসচিব-শীর্ষ এই দুই পদ পেতে নেতাদের অনেকে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি প্রতিদিন ভিড় করছেন রাজধানীর পান্থপথে স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
স্বাচিপ নেতারা যুগান্তরকে জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে কাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পঞ্চম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর সর্বশেষ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাচিপের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন কমিটি গঠনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়ে ওইদিন সম্মেলন স্থগিত করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানকে সভাপতি ও ডা. এমএ আজিজকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।
প্রতি পাঁচ বছর পরপর সংগঠনটির সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে যথাসময়ে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবারের সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে চেয়ারম্যান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউিট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজল কুমার কর্মকারকে কো-চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ’র নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্বাধানীতা চিকিৎসক পরিষদের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান যুগান্তরকে বলেন, ‘২৫ নভেম্বর সারা দেশ থেকে আসা চিকিৎসকদের নিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি উৎসবমুখর ও আনন্দঘন সম্মেলন হবে।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন উদ্বোধনের পর কাউন্সিল অধিবেশন হবে। নতুন কমিটির নেতৃত্বে স্বাচিপ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের মানুষের চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা বিষয়ে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও কিভাবে চিকিৎসা সেবার উন্নতি করা যায় সেটি করবেন বলে আশা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ১৯ বছর ধরে স্বাচিপের নেতৃত্ব দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আমার নেতা। তার প্রতি আমার আনুগত্য নিরুঙ্কুশ। তিনি যে নির্দেশ দেবেন সেটি শতভাগ বাস্তবায়ন করব।’
প্রস্তুতির ব্যাপারে স্বাচিপের বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ যুগান্তরকে বলেন, ‘সম্মেলন সফল করতে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে সারা দেশের সংগঠনের নেতাদের সম্মেলনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এবার হোমিও চিকিৎসকদেরও সম্মেলনে যোগ দিতে দেড় হাজার নিয়ন্ত্রণ পত্র বিলি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি সম্মেলনে ২০-২৫ হাজার চিকিৎসক উপস্থিত হবেন।’
কীভাবে কমিটি গঠন হবে জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, ‘সভাপতি ও মহাসচিব পদের সিদ্ধান্ত সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা তার ওপর আস্থা রাখি। তিনি ঠিক করে দেন। পরে সাংগঠনিকভাবে কমিটির অন্যান্য সদস্য নির্বাচন করা হয়।’
স্বাচিপের কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করি। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে চিকিৎসক সংগঠন হিসাবে সহযোগিতা করি। জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নে ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের সঙ্গে কাজ করি। করোনার সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছি।’
এদিকে সম্মেলনকে সামনে রেখে পদপ্রত্যাশী চিকিৎসক নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। বেশকিছু দিন ধরে পদপ্রত্যাশীরা আকাঙ্ক্ষিত পদের জন্য আওয়ামী লীগদের শীর্ষ নেতাদের কাছে লবিং ও তদবির করছেন বলে জানা গেছে।
স্বাচিপের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার সভাপতি পদে পাঁচজন ও মহাসচিব পদে পাঁচজন করে দুই পদে এক ডজনের বেশি নেতার নাম বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে কে হবেন সভাপতি ও মহাসচিব তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।
তবে আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অতীত যারা আওয়ামী লীগের জন্য বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের কাঁধে নেতৃত্বের ভার দেওয়া হতে পারে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিবকেও স্বপদে বহাল রাখতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
বর্তমানে স্বাচিপ সভাপতি পদে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। দীর্ঘদিন চিকিৎসক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এ নেতাকে আবারও সভাপতি হিসাবে দেখতে চান তার অনুসারীরা।
এছাড়া সভাপতি হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বিএএসএমএমইউ’র সাবেক দুই উপাচর্য- অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ও অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং স্বাচিপের বর্তমানে সহসভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
অন্যদিকে মহাসচিব পদে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বাচিপের বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তাকে পুনরায় এই পদে বহাল রাখা হতে পারে।
এছাড়া এ পদের জন্য আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন-স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, বিএসএমএমইউ’র নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের রেডিওলজির অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজল কুমার কর্মকার, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন এবং বরিশাল মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. মো. তারেক মেহেদী পারভেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. আবু রায়হান, শ্যামলী টিবি হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন, ডা. কামরুল হাসান মিলন এবং স্বাচিপের বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।
সিনিয়র এসব স্বাচিপ নেতা ছাড়াও অনেকেই শীর্ষ পদ পেতে তদবির করছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী বলেও জানান নেতারা।