সম্পাদক

আবদুর রহমান

নিউজ ডেস্ক:

পোল্যান্ডের সাথে সৌদি আরবের পরাজয় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের টিকে থাকার লড়াইকে কঠিন করে দেয়। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে অনেকটা নকআউট পর্বের মতোই টিকে থাকার অস্বস্তি নিয়ে মাঠে নামে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা।লিওনেল মেসি জানতেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপে টিকিয়ে রাখতে হলে তাঁকেই কিছু একটা করতে হবে । মেসি করলেনও। মেক্সিকোর রক্ষণ ভাঙ্গা যখন দুঃসাধ্য মনে হচ্ছিল, তখন দুর্দান্ত এক গোল করলেন। পরে ম্যাচের শেষদিকে তাঁর পাস থেকেই দারুণ আরও একটা গোল করলেন এনজো ফার্নান্দেসও। লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচটা আর্জেন্টিনা জিতল শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে। এই জয় আর্জেন্টিনা ও মেসিকে টিকিয়ে রাখল বিশ্বকাপেও। পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটা জিতলেই এখন পরের রাউন্ড নিশ্চিত আর্জেন্টিনার। সুযোগ থাকবে ওই ম্যাচটা ড্র করলেও। সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচের একাদশে ৫টি পরিবর্তন এনে গতকাল মেক্সিকোর বিপক্ষে দল নামান আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। রক্ষণভাগে শুধু নিকোলাস ওতামেন্দিকে রেখে তিনজনকেই বদলে ফেলেন। দলে ঢুকেন গঞ্জালো মন্তিয়েল, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও মার্কোস আকুনিয়া। মাঝমাঠে গুইদো রদ্রিগেজ ও আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে জায়গা দিতে বেঞ্চে চলে যান লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও পাপু গোমেস।কিন্তু মাঠের খেলায় সেটার ছাপ পড়েছে কমই বরং প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে দেখা মনেই হয়নি এই দলটা টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল সৌদি আরবের কাছে হারার আগ পর্যন্ত। খেলায় কোনো ছন্দ নেই, টানা চার-পাসটা পাসও খেলতে পারছিলেন না আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা। বরং দৃষ্টিকটুভাবে ভুল পাস দিয়েছেন একের পর এক। মেক্সিকো মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগ জমাট রেখে প্রতি আক্রমণের অপেক্ষায় থেকেছে। দুই দলই কিছুটা শারীরিক ফুটবল খেলতে চেয়েছে, ফলে বারবার ফাউলে গতি হারিয়েছে খেলা।ম্যাচের প্রথম সুযোগটা পায় মেক্সিকো। ৯ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে আর্জেন্টিনার বক্সে বল ফেলেছিলেন লুইস চাভেজ। কিন্তু হেক্তর হেরেরা বলে পা লাগাতে পারেননি। আর্জেন্টিনার সুযোগ আসে ৩২ মিনিটে। কর্নার থেকে আসা বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে রদ্রিগো ডি পলকে ফাউল করে মেক্সিকো। ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু লিওনেল মেসির শট ফিরিয়ে দেন মেক্সিকোর গোলরক্ষক গিয়ের্মো ওচোয়া। ৪০ মিনিটে ডান পাস থেকে আসা আনহেল দি মারিয়ার ক্রসে হেড করেছিলেন লাওতারো মার্তিনেজ। কিন্তু বল চলে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে। ৪৪ মিনিটে ফ্র-কিক পেয়েছিল মেক্সিকো। কিন্তু আলেক্সিস ভেগার শট সরাসরি যায় আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের হাতে।বিরতির পরও শুরুর দিকে আর্জেন্টিনার খেলায় খুব একটা ধার বাড়েনি। ম্যাচের ৬০ মিনিটের দিকে আর্জেন্টিনার কোচ রদ্রিগেজ, মার্তিনেজ ও মন্তিয়েলকে তুলে বদলে নামান এনজো ফার্নান্দেস, হুলিয়ান আলভারেস ও নাহুয়েল মলিনাকে। গোলের জন্য আর্জেন্টিনার অপেক্ষায় ফুরায় এর কয়েক মিনিট পরেই। ৬৪ মিনিটে ডান পাশ থেকে থেকে পাস বাড়ান দি মারিয়া। মেসি ছিলেন একেবারে গোলমুখের সোজাসুজি। সেখান থেকেই তাঁর গড়ানো শট মেক্সিকোর তিন-চারজন খেলোয়াড়ের জটলার ফাঁক দিয়ে চলে যায় জালে। মেক্সিকান গোলরক্ষক গিয়ের্মো ওচোয়া বাঁ পাশে ঝাপিয়েও ধরতে পারেননি বল। এবং বিশ্বকাপে গোলসংখ্যায়ও (৮) কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেললেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে এ দুজনের চেয়ে বেশি গোল শুধু গতাব্রিয়েল বাতিস্তুতার, ১০ টি।ওই গোলের পর কিছুটা গতি আসে আর্জেন্টিনার খেলায়। বদলি নামা হুলিয়ান আলভারেজ ৭৬ মিনিটে একবার বাঁ পাস থেকে দারুণ এক দৌঁড়ে ঢুকে পরে মেক্সিকোর বক্সে। তবে তাঁর ক্রসটা কাজে লাগাতে পারেননি মেসি। ৮৭ মিনিটে এসে মেসির কর্নার শর্ট থেকে বল পেয়ে এনজো ফার্নান্দেস দুর্দান্ত এক গতিময় শটে বল মেক্সিকোর জালে পাঠান । ওই গোলেই নিশ্চিত হয়ে যায় এই ম্যাচে আর পয়েন্ট হারাচ্ছে না আর্জেন্টিনা।