নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন বিদেশিরা। ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলো পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে।

এসব বিবৃতিতে বিদেশিরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন। তারা সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানাচ্ছেন।

বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দলটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সমাবেশটির আয়োজন করছে। বিদেশিরা মূলত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বিবৃতি দিচ্ছে। তবে ওই সব বিবৃতিতে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে। সরকার অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতি, মানবাধিকার এবং নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশিদের মন্তব্যকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে।

ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেছেন, মুক্তভাবে মতপ্রকাশ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজন করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বিবৃতিতে জাতিসংঘ দূত বলেন, এ বছর কোভিড মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে অসহায় মানুষেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবাধিকার ডিক্লারেশনে উল্লেখ আছে, প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন, সম্মান ও অধিকারের দিক থেকে সমান। জাতিসংঘ সব বাংলাদেশির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।

এদিকে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক করেছে দেশটির দূতাবাস। দূতাবাস ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছে, বাংলাদেশের প্রধান দুটি বড় রাজনৈতিক দল ১০ ডিসেম্বর ঢাকার র‌্যালির ঘোষণা দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে হওয়ার কথা থাকলেও এই বিক্ষোভ সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। বাড়তে পারে সহিংসতা। নিজস্ব ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে তারা। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগে অথবা ওই বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো সভাসমাবেশ ও অন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড এরই মধ্যে শুরু করেছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই ঘন ঘন রাজনৈতিক সভাসমাবেশ, বিক্ষোভ হতে পারে। এর তীব্রতাও বাড়তে পারে। এরই মধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার ভিন্ন এলাকায় র‌্যালি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল।

এতে সংঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়। ফলে (বাংলাদেশে অবস্থানরত) মার্কিন নাগরিকদের নজরদারি বাড়িয়ে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আপনার উচিত হবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ এড়িয়ে চলা। কোনো বড় সমাবেশের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা রিভিউ করতে, চারপাশের বিষয়ে সচেতন থাকতে। এর মধ্যে আছে স্থানীয় বিভিন্ন ইভেন্ট। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিষয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মনিটর করতে। অনুরোধ করা হয়েছে সব সময় নিজের সঙ্গে চার্জযুক্ত মোবাইল ফোন বহন করতে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায়।

বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। মঙ্গলবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পুলিশের হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা যেভাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তার এই বক্তব্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে নেড প্রাইস বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মুক্তমত, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষা এবং সম্মান জানানোর আহ্বান জানাই। আমরা পুলিশের হয়রানি, বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেফতার এবং তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিরুদ্ধে কড়াকড়ির রিপোর্টগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশের সব পক্ষকে আহ্বান জানাব তারা যেন আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন এবং সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকেন। কোনো দল বা প্রার্থী যাতে অন্য দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকি, উসকানি কিংবা সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে, তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি আরও বলেন, সব প্রার্থীর ভোটারদের সঙ্গে সহিংসতা, হয়রানি এবং হুমকি ছাড়া যোগাযোগ করতে পারা প্রকৃত নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের সহিংসতার রিপোর্টগুলো স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্তে উৎসাহিত করি।

এ ছাড়া ওই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রসঙ্গও আসে। এতে পিনাকী ভট্টাচার্য এবং সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র জানে বলে উল্লেখ করেন নেড প্রাইস।