স্টাফ রিপোর্টারঃ
১৯৭১ সাল, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে শাজাহান খানের নেতৃত্বে মাদারীপুর কলেজ মাঠে খলিলুর রহমান খান সহ অসংখ্য ছাত্র ও যুবক ট্রেনিং শুরু করে। ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার সেনাবাহিনী ঘুমন্ত বালালির
উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে মহাকালের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং পাকিস্তানি দখলদার সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতিকে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাদারীপুরের দামাল ছেলেরা অস্ত্র প্রশিক্ষন নিতে প্রথম ধাপে স্টুয়ার্ড মজিবর রহমানের নেতৃত্বে” ক্যাপ্টেন শওকত আলী কর্তৃক বাছাইকৃত ১৬৫ জন যুবক প্রতিবেশী দেশ ভারতের আগড়তলায় অস্থি নগরে যায়। এই দলে ছিল। মাদারীপুর কলেজের (গ শ্রেণীর ছাত্র খলিলুর রহমান খান। প্রশিক্ষন শেষে ২১ যে তারা দেশে ফিরে এসে মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এদের মনে সাড়া দেশপ্রেমিক অদম্য সাহসী যুবক খলিলুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নে বাহাদুরপুর ও কলাগাছিয়া গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করেন। তিনি আরো যুবকদের সংগঠিত করে আমনি নক্ষন দিয়ে ৩৬ । লেন “খলিল বাহিনী”। তিনি বহু ছোট বড় যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন ও নেতৃত্ব দেন। তার বাহিনী স্বাদারীপুরের ঢোকার ব্রীজ, আওগ্রাম ব্রজ, সমাদ্দার ব্রীজ, ফরিদপুরের বাড়া ব্রীজ ও ঘোড়াকালী রেলওয়ে ব্রীজ সহ বহু ব্রীজ ধ্বংস করে পাক হানাদার বাহিনীর যো• “বাগ । খাচ্ছন্ন করে। এই সময় মাদারীপুরের আমজনতা কমান্ডার খলিলকে মেজর খলিল নামে ভূষিত করেন তিনি পাক হানাদার বাহিনীর একটি জীপ গাড়ি ধ্বংস করতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন ।
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর দখলদার পাক হানাদার সেনা বাহিনী মাদারীপুর ছেড়ে চলে যাচ্ছে গোপনে এই সংবাদ পেয়ে খালিক, বাইনীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাগণ সমাদ্দার ব্রীজের আশেপাশে অবস্থান পাক হানাদার সেনা বাহিনী মাদারীপুর থেকে যাওয়া পথে সমাদ্দার ব্রীজের নিকট আসা মাত্রই খলিল বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাগন এন্টি ট্যাংক মাইনের আঘাতে পাক বাহিনীর ট্রাক ধ্বংস করে দেয়। তখন পাক বাহিনী ব্রীজের পাশে বাংকারে অবস্থান নেয়। ইতিমধ্যে কেন্দুয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাসহ মাদারীপুরে তিন ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাগণ একত্রিত হয়ে সর্বতভাবে এই যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। তিন দিন দুই রাত বিরামহীন যুদ্ধ চলে। ১০ ডিসেম্বর সকাল ১১ টার সময় খলিল বাহিনীর সর্ব কনিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু পাক বাহিনীর বাংকারে হ্যাণ্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পাক বাহিনীর গুলিতে সরোয়ার হোসেন বাচ্চু শহীদ হন এবং আক্তার হাওলাদার গুরুতরভাবে আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ভীত না হয়ে যুদ্ধের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি করে। এমন সময় সুসজ্জিত পাক বাহিনীর মেজর আব্দুল হামিদ খটক বাংকার থেকে বেরিয়ে এসে সাদা রুমাল উড়িয়ে যুদ্ধকালীন কমান্ডার খলিল বাহিনীর প্রধান খলিলুর রহমানের কাছে ৩৭ জন সৈনিক মাজার বেল্ট, মাথার টুপি, ৪৫৪ বোরের রিভলবল ভাবী অস্ত্রসম সমর্পণ করে খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিসুর রহমান খানের নেতৃত্বে আত্মসমর্পনকারি ৩৭ জন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সাথে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পায়ে হেটে মাদারীপুর শহরে এসে উপস্থিত হয়। ৩. অসমর্পনকারি দখলদার পাকিস্তানি হানাদার সেনা বাহিনী জোয়ানদের কারাগারে আটক রাখা হয়। এই যুদ্ধে ২০ জন পাক হানাদার বাহিনী, ২৫ জন মুজাহিদ ও রাজাকার নিহত হয়। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাক দখলদার সেনা বাহিনীর কব্জা থেকে মাদারীপুর মুক্ত হয় এবং সরোয়ার হোসেন বাচ্চু শহীদ হয় বিধায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান “। মুক্তিবাহিনী ও জনসাধারণকে সংগে নিয়ে ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস ঘোষণা করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং কেন্দুয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সরদার সোরাব হোসেনের সভাপতিত্বে, এসময় বক্তব্য রাখেন – এডিসি রেভিনিউ, মোঃ সাইফুল ইসলাম, মাদারীপুর পুলিশ সুপার, মাসুদ আলম, খলিল বাহিনীর প্রধান, খলিলুর রহমান খান, মাদারীপুর জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, শাজাহান হাওলাদার,সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মোঃ মাঈনুদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওবায়দুর রহমান কালু খান, মাদারীপুর -২ আসনের সংসদ সদস্যের স্থানীয় প্রতিনিধি, আজিজুর রহমান শিবু খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মাদারীপুর জেলা সভাপতি, ফজলুর রশীদ সহ জেলার মুক্তিযোদ্ধা সহ সর্বস্তরের জনগণ।