স্টাফ রিপোর্টার
রংপুরে রোকেয়া দিবস ২০২২ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন রংপুর এর আয়োজনে ৩ দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর ২০২২) রোকেয়া দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার বাস্তুভিটা রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন জানায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার-মোঃ সাবিরুল ইসলাম,জেলা প্রশাসক-ড. চিত্রলেখা নাজনীন,পুলিশ সুপার-মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী,
এসময় উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ হতে বেগম রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসটির শুভ উদ্বোধন করেন, প্রধান অতিথি সাবিরুল ইসলাম, বিভাগীয় কমিশনার রংপুর।০৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া দিবস। প্রতিবারের মত এ বছরও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করতে সরকারীভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার, বুকলেট ও স্যুভেনির প্রকাশিত হয়েছে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের লক্ষে দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচিও গ্রহণ করেন। এমনি ভাবে ৯০টি বছর চলছে।বাস্তবতায় বাতির নীচে অন্ধকারই থাকছে অভিযোগ পায়রাবন্দ এলাকাবাসীর।
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শ সামনে রেখে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী এই নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে।
মৃত্যুবরণও করেন তিনি একই দিন ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বরে। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোন চল ছিলনা। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারে সবার অগোচরে তার বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়তে এবং লিখতে শেখেন।
তার জীবনে শিক্ষালাভ ও মূল্যবোধ গঠনে বড় ভাই ও বোন উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর উত্সাহে ও নিজের আগ্রহে তিনি লেখাপড়ার প্রসার ঘটান। বেগম রোকেয়া ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হন।
তিনি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো—মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধ-বাসিনী।বেগম রোকেয়া শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদূতই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, নিবেদিত প্রাণ একজন সমাজকর্মী।
বিশ শতাব্দীর প্রথম দশকে বেগম রোকেয়া তার শানিত অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন যে, সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা নারী উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। তাই তার চিন্তা-ভাবনা-উদ্বেগ সর্বক্ষণ আবর্তিত ছিল নারী জাগরণ ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পথিকৃৎ। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এবং সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া তা সম্ভব নয়। তাই তিনি জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করেন। ১৯৭২ সালেই চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেন।
এ বছর বেগম রোকেয়া দিবসে ৪ জন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বরাবরই বেশ ক’টি গুরত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পরে যায়। দিবসটি আসলেই নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের মরদেহ কোলকাতা থেকে পায়রাবন্দে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসা হোক আন্দোলন সংগ্রাম ও দাবী তোলা হয়। বাস্তবে এ দিনটি চলে গেলে এই দাবীও হারিয়ে যায়। এমনকি তার বাড়িটির যথাযথ রক্ষনাবেক্ষনও ঠিকঠাক হয়না। তাই দিনে দিনে রোকেয়ার বসতভিটার সীমানা কমিয়ে বেদখল হতে থাকে।
কারা কতটুকু বেদখল করেছে তার উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন ও প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তার আর খোঁজ থাকেনা। এমনিভাবে রোকেয়ার নাম জস অনেককিছু ব্যবহার করা হলেও বাস্তবিকতায় তার রেখে যাওয়া আত্নীয় বংশধর ও স্মৃতিবিজরিত বসত ভিটার রক্ষনা বেক্ষন ও যত্ন অনেকটা অবহেলার বটে। এমন আক্ষেপ অভিযোগের কথাগুলো বলেন খোঁদ রোকেয়ার স্মৃতি বিজরিত এলাকা পায়রাবন্দের অসংখ্য এলাকাবাসী।##