স্টাফ রিপোর্টারঃ
নওগাঁর মন্ডল পাড়ার ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, চমক দেখান কিশোরী ঘোড়সওয়ার তাসমিনা আক্তার।
গ্রামের বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতই যেন খেলার মাঠ। মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে একটি জায়গা চিহ্নিত করা। মানুষজন গোল হয়ে বসা, কেউবা দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি সবার এক দিকেই। মাঠের মাঝখানে চিহ্নিত স্থান দিয়ে প্রাণপণে ছুটছে ঘোড়া। ঘোড়া থামলেই সওয়ারের চাবুকের ঘা। ছুটছে ঘোড়া। উপস্থিত দর্শকরা হর্ষধ্বনি ও তালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে সওয়ারদের। এই চিত্র হলো নওগাঁ পৌরসভার পার-নওগাঁ মণ্ডলপাড়া এলাকার ফসলি মাঠে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে পার-নওগাঁ নবতরুণ সংসদ নামের একটি সংগঠন হারিয়ে যাওয়ার পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলা এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলা ও পাশ্ববর্তী বগুড়া, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিতায় ৫৪টি ঘোড়া অংশগ্রহণ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল ৩টায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়। তার আগেই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের গ্রাম থেকে মাঠে আসতে শুরু করে স্থানীয় লোকজন। খেলা শুরুর আগেই পার-নওগাঁ মণ্ডলপাড়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধরা এসে জড়ো হতে থাকে ঘোড়দৌড় উপভোগ করতে। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা শেষ হয় ৫টায়।
প্রবীণ আকবার হোসেন বলেন, “আমার বাপ-দাদারাও ঘোড়া দৌড়াত। আমিও বয়সকালে খেলেছি। এই খেলাটি আমার খুব ভালোলাগে। তাই এখনো মাঠে আসি।”
ঘোড়দৌড় দেখতে আসা দর্শক শিক্ষক মিরাজ খান বলেন, “ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। আগে বিভিন্ন স্থানে খেলাগুলো দেখা যেত, কিন্তু এখন সচরাচর আর দেখা যায় না। দীর্ঘদিন পরে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করলাম।”
স্কুলছাত্রী সুমনা বিশ্বাস বলেন, “এবারই প্রথম ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখলাম। বাবার সঙ্গে দেখতে এসেছি। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে খুব ভালো লেগেছে।”
নওগাঁর ধামইরহাট থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছিলেন ওবায়দুল হক। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন তার মেয়ে ঘোড়সওয়ার কিশোরী তাসমিনা আক্তার।
ওবায়দুল হক বলেন, “প্রায় ১০ বছর ধরে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছি। যেখানে ঘোড়া দৌড়ের খবর পাই সেখানেই ছুটে যাই। আয়োজকেরাও খবর দেন। এটা আমার একটা সখ। আমার মেয়ে তাসমিনারও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া একটা সখ। পেপার-পত্রিকার কল্যাণে সারা দেশের মানুষ তার নাম জানে। এবার সে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে।”
আয়োজক সংগঠন পার-নওগাঁ নবতরুণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার তানজিদ সম্রাট বলেন, “এলাকার তরুণ ও যুবকদের নির্মল বিনোদন দিতে এবং তাদের মাদক দিতে দূরে রাখতে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি। গত পাঁচ বছর ধরে ছোট যমুনা নদীতে সংগঠনের উদ্যোগে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন হয়ে আসছে। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা এবার আয়োজন করা হলো। স্থানীয় লোকজন এই খেলা থেকে বেশ খুশি। আগামীতেও এ ধরনের আয়োজন করা হবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক।
সংগঠনের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবতরুণ সংসদের সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারওয়ার তানজিদ সম্রাট, সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ সদর মডের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর গফুর মানজার, সাংবাদিক আসাদুর রহমান জয়, মামুনুর রশীদ বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপ থেকে প্রথম হয় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে আসা মামুন খানের ঘোড়া, দ্বিতীয় হয়েছে বগুড়ার ধুনট থেকে আসা ফরহাদ হোসেনের ঘোড়া ও তৃতীয় হয়েছে ধুনটের আলী হোসেনের ঘোড়া। ‘খ’ গ্রুপ থেকে প্রথম হয়েছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফারুক হোসেনের ঘোড়া, নওগাঁর ধামইরহাটের মাহাবুবের ঘোড়া দ্বিতীয় ও সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা এলাকার মিলনের ঘোড়া তৃতীয় হয়েছে। ‘গ’ গ্রুপ থেকে প্রথম হয়েছে বগুড়ার শেরপুরের নাহিদ হোসেনে ঘোড়া, ধামইরহাটের বাচুচুর ঘোড়া দ্বিতীয় ও বগুড়ার ধুনটের রনির ঘোড়া তৃতীয় হয়েছে।
প্রতিযোগিতায় প্রতিটি গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারীকে টেলিভিশন, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে স্মার্ট ফোন ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে রাইস কুকার উপহার দেওয়া হয়।
অবশেষে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীকে এক হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়
উজ্জ্বল কুমার সরকার
ফোনঃ০১৭২৬-৩৭৬২৮২ তারিখ ১১/১২/২২
নওগ