ঢাকা তেজগাঁও কলেজের ডিপার্মেন্ট থিয়েটার এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে ১১ ডিসেম্বর, রবিবার সন্ধ্যায় আলাপ আলোচনা করে জানা গেছে,
চলতি মাসেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার মেট্রো রেলপথ চালু করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে দিন রাত চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তথ্যানুযায়ী, এই অংশের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের আগেই বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এগিয়ে চলছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজও। এই অংশের পূর্ত কাজে অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ আর এমআরটি লাইন-৬ এর সার্বিক গড় অগ্রগতি ৮৪.২২ শতাংশ।

যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ৬ ধাপে রয়েছে, এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪। এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।

রাজধানীর উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ২১.২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণ হচ্ছে এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায়। যা ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও তা বিলম্বের ইংগিত দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তাতে করে এই কাজ ২০৩০ সালে গিয়ে ঠেকবে। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ২১.২৬ কিলোমিটার মেট্রোলাইন নির্মাণ হবে। তবে আপাতত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়ন হচ্ছে মোট আটটি প্যাকেজে ভাগ করে। এরমধ্যে প্যাকেজ-১ এ রয়েছে ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়ন। প্রকৃত পক্ষে এই প্যাকেজের কাজ শতভাগ শেষ। শেষ হয়েছে প্যাকেজ-২ এর ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ। মোট ৫২ টি অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্যাকেজ-২ এর কাজও শেষ। প্যাকেজ ৩ ও ৪ এ রয়েছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভায়াডাক্ট ও নয়টি স্টেশনের নির্মাণ কাজ। যা এরইমধ্যে প্রায় শেষ। নভেম্বর পর্যন্ত এই অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ। ডিসেম্বরে চালু করার লক্ষ্যে এই রেলপথের ৯টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র দু’টি স্টেশন বাদে সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে দুই স্টেশনের কাজ বাকি তা উদ্বোধনের আগেই শেষ করা সম্ভব হবে। প্যাকেজ-৫ এ আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩.১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি মেট্রো স্টেশন নির্মাণ। এই পথে ভায়াডাক্ট ও স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ কাজ শেষ। এই প্যাকেজের আওতায় স্টেশনগুলোর এন্ট্রি, এক্সিট, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও পাম্বিং কাজ চলমান। কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট স্টেশনে রুফ শিট স্থাপনের কাজ চলমান। গত নভেম্বর পর্যন্ত এই অংশের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০.২৪ শতাংশ। আর প্যাকেজ-৬ এ কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪২২ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট ও ৪ টি স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ। এই প্যাকেজের আওতায় স্টেশনগুলোর এন্ট্রি, এক্সিট, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও পাম্বিং কাজ চলমান।

শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনের রুফ শিট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আর মতিঝিল স্টেশনের রুফশিট স্থাপনের কাজ চলমান। এই অংশের কাজের অগ্রগতি ৯০.৭৪ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫.৮৭ শতাংশ। এই অংশে ৭টি স্টেশন নির্মাণাধীন। আর কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আরও একটি স্টেশন বাড়বে। সব মিলিয়ে এই প্যাকেজে মোট মেট্রোস্টেশন হবে ১৭টি।

প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সংগ্রহ ও সরবরাহের অগ্রগতি ৯০.১৭ শতাংশ। আর প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ।

ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এই প্যাকেজের আওতায় ২৪টি ট্রেন সেটের মধ্যে ১৯টি ডিপোতে পৌঁছেছে। এই মেট্রোসেটের কারিগরী পরীক্ষা, ফাংশনাল টেস্ট ও পারফরমেন্স টেস্ট চলছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ৮৪.৫০ শতাংশ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

উদ্দেশ্য ছিলো মেট্রোরেল চালু হলে রাজধানীর যানজট কমে আসবে। সহজ হবে যাতায়াত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোর একাংশ চালু হলেও রাজধানীবাসী এখনই যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে না। সেজন্য মেট্রো পুরোপুরি চালুর অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘এখন তো শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। যে মানুষগুলো উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে নামবেন তারা মতিঝিল কিংবা শাহবাগ বা অন্যত্র কি করে পৌঁছাবেন? বাস কিংবা অন্য কোনো ট্রান্সপোর্টে। যে পথে যাবেন সে পথের তো যানজট কমছে না। ওই যাত্রী ১০ কিংবা ২০ মিনিটে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে পৌঁছাবেন কিন্তু মতিঝিল পৌছাতে সেই দুই ঘণ্টাই লেগে গেল। তাহলে তার জন্য সুবিধা হলো না। হ্যাঁ, তবে এটা ঠিক যে উত্তরা থেকে চার ঘণ্টার পথ হয়তো কমে এক কিংবা দুই ঘণ্টায় ঠেকবে। যানজট থেকে স্বস্তি পেতে রাজধানীতে পুরোপুরি মেট্রোরেল চালু হতে হবে।’

ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। এমআরটি লাইন-১ এর কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। আর এমআরটি লাইন-৫ এর নর্দানের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে। আর এমআরটি লাইন-৫ এর সাউদার্ন এবং লাইন-২ ও ৪ এর আওতায় উড়াল ও পাতাল রেলের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিলো ২০৩০ সালে।