Tanvir Shawon

ষ্টাফ রিপোর্টার:

সৌর বাতির আলোয় ঢাকার সড়ক আলোকিত করার উদ্যোগ সফলতা পায়নি। ঢাকা দক্ষিণের সড়ক বাতিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আর ঢাকা উত্তরের সড়কবাতিগুলো ধুলা আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে। রাতে ওইসব সড়কে বাতি আছে বলে বোঝাও যায় না। জোনাকির মতো টিমটিমে জ্বলে। ঢাকার সড়ক আলোকিত করার প্রায় ২৪ কোটি টাকার প্রকল্প সফল হয়নি। ফলে সেখানে নতুন করে বৈদ্যুতিক সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কাকরাইলের প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত অর্ধশত সৌরবাতি স্থাপন করে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এতে সরকারের সোয়া দুই কোটি টাকা জলে গেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উত্তরা মডেল টাউনের তিনটি এভিনিউতে ২৬০টি এলইডি সৌরবাতি স্থাপন করে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত ডিএনসিসির উত্তরার সড়কের সৌরবাতিগুলোও প্রায় অকেজো। বাতিগুলো ধুলোয় আচ্ছাদিত। নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় না। এজন্য কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। এছাড়া সূর্যের পর্যাপ্ত আলোও পাচ্ছে না বাতিগুলো। ফলে সন্ধ্যায় ওইসব সড়ক এক প্রকার অন্ধকারে ডুবে থাকে।

আরও জানা যায়, ডিএসসিসির সড়কের সৌরবাতিগুলো খুলে নেওয়া হয়েছে। তবে প্যানেলগুলো রয়ে গেছে। আর কোটি কোটি টাকা মূল্যের ব্যাটারি, কন্ট্রোলারসহ অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ মাটির নিচেই নষ্ট হচ্ছে। এসব উঠিয়ে ফেলতে ফাইল চালাচালি হলেও তা অনুমোদন পায়নি। ফলে যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে পড়ছে। যন্ত্রাংশগুলো বিক্রি করে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানো সম্ভব হতো। ২০১২ সালে সড়কে সৌরবাতি স্থাপন করে ডিএসসিসি। বছর না যেতেই সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। পরে সেখানে বৈদ্যুতিক সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানায়, ডিএসসিসির সড়কে সৌরবাতি স্থাপনের কিছু দিনের মধ্যে সেসব অকেজো হয়ে পড়ে। এসব সৌরবাতি পর্যাপ্ত আলো না দেওয়ায় রাতের বেলা ওই সড়ক অন্ধকার থাকত। এতে করে সড়কে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও দুর্ঘটনাসহ অন্যসব কর্মকাণ্ড ঘটত। এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সেখানে আবার এলইডি সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন হয়ে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত সৌর সড়কবাতির পোলগুলো দেখা যায়। প্যানেলের পুরানো বাতিগুলো খুলে নতুন করে এলইডি বাতি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো এলাকার প্যানেল চুরি হয়ে গেছে। উত্তরে সড়কের সোলার প্যানেলগুলোরও অবস্থা খুবই খারাপ। আশপাশের ভবন ও গাড়ির আলোয় কোনো রকম চলাচলের উপযোগী থাকছে সড়কগুলো।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরীক্ষামূলকভাবে ডিএসসিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্প সফল হলে পরে গুলশান, হাতিরঝিল, আরামবাগ, বাংলামোটর, নাবিস্কো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থাপনের কথা ছিল। প্রকল্পের ফলাফল পর্যালোচনা করে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায় ডিএসসিসি। সোয়া দুই কোটি টাকার প্রকল্প অল্প দিনেই ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ মানহীন কাজ বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পে বরাদ্দের অর্ধেক টাকায় দরপত্র পাওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিুমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে কাজ শেষ করেছে। প্যানেলের বাতিগুলো ছিল মাত্র ৬০ ওয়াটের। অথচ এই সড়কে আগের সোডিয়াম বাতিগুলো ছিল ১৫০ ওয়াটের। কাকরাইল থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত প্রকল্পে ৬১টি সৌর সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। আর প্রতিটি পোস্টের ওপর বসানো সাড়ে ৫ ফুট আয়তনের এক জোড়া সৌর প্যানেল। ৬১টি প্যানেলে ১২২টি বাতির এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে দরপত্রে দুই কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকায় ঠিকাদার পাওয়ায় বাকি টাকা আর খরচ হয়নি।

জানা যায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ‘সোলার স্ট্রিট লাইটিং প্রোগ্রাম ইন সিটি করপোরেশন’-এর আওতায় উত্তরা মডেল টাউন এলাকায় ২৬০টি সৌর সড়ক এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়। বাতিগুলো ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেছে। চায়না কোম্পানির সরবরাহ করা সৌর সড়ক বাতিগুলো জোনাকির আলোর মতো জ্বলছে। চায়না কোম্পানির দুই বছর রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা থাকলেও তারা এক বছর করেছে। এরপর করোনা আসায় চায়না কোম্পানি আর বাংলাদেশে আসেনি। এখন সেসব ডিএনসিসি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। তবে অতিরিক্ত ধুলায় বাতিগুলো এক প্রকার অকার্যকর। ডিএনসিসির বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের অদক্ষতা ও কাজের গাফিলতিও রয়েছে। উত্তরা মডেল টাউনের ৪ নম্বর সেক্টরের শাহজালাল এভিনিউ, উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ ও ১২ নম্বর সেক্টরের শাহ মখদুম এভিনিউর সড়কবাতিগুলোর অবস্থা খুবই করুণ।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাফর আহমেদ জানান, ঢাকা শহরের অতিরিক্ত ধুলোয় সড়কের সৌর সড়কবাতি প্রকল্প সফল হয়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে। এটা পরীক্ষামূলক কাজ ছিল। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকায় পরে সৌর সড়কবাতি স্থাপন উদ্যোগ থেকে সরে আসা হয়েছে।

ডিএনসিসির বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সাল থেকে বাতিগুলো চলছে। তবে বাতিগুলো টিকিয়ে রাখতে ধুলো বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সৌরবাতি ঢাকার সড়কের জন্য কার্যকর নয়। তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্প বিদ্যুৎ বিভাগের ছিল, ডিএনসিসির নয়। এখানে ডিএনসিসির কোনো অর্থের অপচয় হয়নি।