স্টাফ রিপোর্টারঃ
নরসিংদীর রায়পুরার মির্জারচরের ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল মানিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ও মামলার এজাহারভুক্ত আরও চার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার দিবাগত মধ্যরাতে নরসিংদী শহরের শাপলা চত্বর ও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রায়পুরার মির্জারচর ইউনিয়নের মির্জারচর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে মো. নাসির মিয়া (২৪), দ্বীন ইসলামের ছেলে মো. জুয়েল মিয়া (২২), ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. দুলাল (৩২) ও পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দি গ্রামের মৃত শাহ মুরতুজ আলীর ছেলে মো. বাবুল মিয়া (৪৮)।
এই মামলায় এর আগে দুই দফায় দুটি একনলা বন্দুক ও ১০ রাউন্ড গুলিসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মহরম আলী (৪৮), মো. আব্দুল্লাহ (৩৫), রমজান মিয়া (২৮) ও রাসেল ওরফে এবাদুল্লাহ (৩৫) নামের চারজন।
র্যাব জানায়, রায়পুরার চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরেই ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবালকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের একসপ্তাহ আগে করা পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে ইউনিয়নটির শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি সভা শেষে ফেরার পথে চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের আসামীরা। চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তারা গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছিলেন র্যাব সদস্যরা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের কয়েকজন নরসিংদী শহর ও মাধবদী এলাকায় আত্মগোপনে আছেন। তাদের অবস্থান শনাক্ত হওয়ার পর গত রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত র্যাবের দুটি পৃথক দল নরসিংদী শহরের শাপলা চত্বর ও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকার দুইটি বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় শাপলা চত্বর থেকে মো. নাসির মিয়া ও মো. জুয়েল মিয়া এবং মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মো. বাবুল মিয়া ও মো. দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার চারজনই চেয়ারম্যান হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে তাদের কাছে স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে র্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন জানান, গ্রেপ্তার চারজনকে এরই মধ্যে মামলার তদন্তকারী সংস্থা জেলা গোয়েন্দা শাখার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
গত ৩ ডিসেম্বর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে রায়পুরার মির্জারচর ইউনিয়নের শান্তিপুর বাজার এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে দুর্বৃত্ত্বের গুলিতে বিদ্ধ হন চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল মানিক। এ সময় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানকে দ্রুত উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মো. জাফর ইকবাল মানিক রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের পরপর দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুইদিন পর নিহত চেয়ারম্যানের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ করে রায়পুরা থানায় মামলা করেন।