নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ, চীন এবং কানাডা সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিমাত্রার ভয়াবহ বন্যা দেখা যাচ্ছে। এত ঘন ঘন বন্যার কারণ হিসেবে আকাশের নদী বা উড়ন্ত নদীকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিবিসি জানিয়েছে, আকাশের নদী বা উড়ন্ত নদী হল ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয় বাষ্পের স্তম্ভ যার উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে, পরে তারা ঠাণ্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশ জুড়ে চলাচল করা মোট জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে।

একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। যদিও এই নদীগুলো ক্রমেই দীর্ঘ ও প্রশস্ত হচ্ছে। অনেক সময় তা ৫ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ ও প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবুও মানুষ এই নদী চোখে দেখতে পায় না। তারা যা দেখে তা শুধুই কিছু পুঞ্জিভূত মেঘ।

নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন, এই নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে দেখা যেতে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট বেশ কার্যকর হতে পারে। দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতোটা না আর্দ্রতা ছড়ায় তার চাইতে ১৫ গুণ বেশি আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী এই নদীগুলো।

এত ঘন ঘন বন্যা হওয়ার ঘটনা বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর কারণে হয়েছে, যা ক্রমেই আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের দিকেই পর্যবেক্ষণ করা হয়। অন্যান্য অঞ্চলে এই সুবিধা নেই। নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং প্রায়শই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। যা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে। এই উড়ন্ত নদীগুলো গড়ে, যে পরিমাণ পানি নিঃসরণ করে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।

বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো সবসময়ই ছিল, তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বৈশ্বিক উষ্ণতা আরও বেশি জলীয় বাষ্প তৈরি করছে যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে পানি ঝরে। যার কারণে বিপর্যয়কর বন্যা এবং ভূমিধ্বস দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৬০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ক্রমেই বাড়ছে।

এদিকে, ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন যে, ভারত মহাসাগরের উষ্ণ পরিবেশ উড়ন্ত নদী তৈরি করছে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে। যখন সমুদ্রের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে তখন তা বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোয় জমা হতে থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো এই বিপুল পরিমাণ আর্দ্রতা বা পানি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন ধরে ভূপৃষ্ঠে ফেলতে থাকে। এর ফলে কম সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত হয় এবং থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরে।