
আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ
প্রাচীন শহর ও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। যে রাজধানীতে দূষণের মাত্রা কম থাকার কথা সেই রাজধানী এখন দূষণের চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে। অদৃশ্য কালো শক্তি ঢাকার দূষণের মাত্রা কমতে দিচ্ছে না।
শহরে চারপাশে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে বায়ু দূষনের অন্যতম প্রধান কারন ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া। কালো ধোঁয়ার সঙ্গে সালফার-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে বাড়ছে মানুষের কিডনি জটিলতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি। সেই সঙ্গে শিশুরা নিউমোনিয়া ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগেরও সম্মুখীন হচ্ছে।
গাড়ি ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে বায়ুমণ্ডলকে ধ্বংস করে। বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান যখন বেড়ে ওজন স্তর ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে শুরু করেছে। ওজোন স্তরের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষয় হলে জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর অতি বেগুনে রশ্নি কোন প্রকার বাধা ছাড়াই সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে। এটি সমগ্র জীবজগতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। এই অতি বেগুনে রশ্নি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ত্বকের ক্যান্সার সহ অনেক মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করবে।
তাই ঢাকা শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা যদি এখন কমানো সম্ভব না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জীবন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।বায়ু দূষণকারী যানবাহনের বিষয়ে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,ট্রাফিক পুলিশকে চোখ ফাঁকি দিতে অনেক ফিটনেসবিহীন/অনুমদনবিহীন গাড়ি রং করে পুনরায় রাস্তায় নামানো হয়।ফলে ফিটনেসবিহীন/অনুমদনবিহীন গাড়িগুলো ধরা কঠিন হয়ে পরেছে। যার কারণে বাড়ছে বায়ু দূষণের মাত্রা।
তিনি আরও জানান ঢাকায় আজকাল পাঠাও, উবার এবং অনলাইনের এর অ্যাপস মাধ্যমে অনেক বাইক ভাড়ায় চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে অনেক বাইকের ইঞ্জিন বেশি পুরাতন হয়ে যাওয়ায় কাল ধোঁয়া নির্গমন বেশি হচ্ছে, যার ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে।
বায়ু দূষণ রোধে এসব ফিটনেসবিহীন/অনুমদনবিহীন গাড়ি কিভাবে রাস্তায় ব্যবহার করা হয় এবং এর পিছনে কারা জড়িত আছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পুরাতন ইঞ্জিল চালিত বাইক গুলোকে রাস্তা থেকে তুলে দিতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আরও কঠিন ভূমিকা পালন করতে হবে। যেগুলো যানবাহনের ফিটনেস নেই বললেই চলে, সেইসব যানবাহন রাস্তা থেকে তুলে দিতে হবে এবং তা অমান্য করলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ও এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। যাতে সহজে ফিটনেস বিহীন যানবাহনের একটা তালিকা করতে পারে।
সেই সাথে কলকারখানাগুলো ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে দূষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে যাওয়ার আগেই কলকারখানাগুলো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে । যেসব কল-কারখানা তে দূষণের মাত্রা বেশি হবে সেই সব কলকারখানা গুলোকে জরিমানা করতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।তবেই দূষণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রফেসর ডঃ জাকারিয়া বলেন, কলকারখানা ধোঁয়া কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার সাথে কলকারখানাগুলো শহরের বাইরে স্থাপন করতে হবে। যদি শহরের বাইরে নেওয়া হয় তাহলে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে এবং পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমানো সম্ভব হবে।বাসা বাড়ি অফিসে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহারের পরিমান হ্রাস করতে হবে।
কাল ধোঁয়ার পরিমান কমাতে নতুন ছোট ছোট মিনি বাসের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে এবং তার সাথে কিছু দ্বিতল বাসের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। প্রত্যেকটা কলকারখানার বর্জ্য কোথায় ফেলতেছে সে ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। যেসব কলকারখানা গুলো এই ব্যাপারে উদাসীন থাকবে সেসব কলকারখানা গুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদেরকে আইনি নোটিশ দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। সেই সাথে বনায়ন বৃদ্ধি করতে জনসচেতনা মূলক বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বিশেষ করে রাস্তা চারপাশে গাছপালা সংখ্যা বাড়ানো এবং আবাসিক এলাকায় ও গাছপালার সংখ্যা বাড়াতে হবে। নির্মাণ কাজ পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলতে হবে। ময়লা রাখার জন্য ডাস্টবিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং সবাইকে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে হবে। সর্বোপরি আমাদের অধিক সচেতন হতে হবে। পরিবেশের বিপর্যয় হবে এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে করে আমাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে যায়।