
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ডনাল্ড ট্রাম্প ক্যানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন৷ এই হুমকি স্মরণে রেখে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্যানাডা৷
অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের জন্য ক্যানাডাকে দায়ী করে এই হুমকি দেন ট্রাম্প৷ এছাড়া ক্যানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে সংযুক্ত করারও কথা বলেন তিনি৷ গতসপ্তাহে পদত্যাগ করা ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গ্রেট স্টেট অফ ক্যানাডার গভর্নর’ বলেও ঠাট্টা করেন ট্রাম্প৷
কিছু বিশ্লেষক ট্রাম্পের এসব বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে না নিলেও ক্যানাডার রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদেরা এর সমালোচনা করেছেন৷ বিশেষ করে, নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প যেহেতু চীন, মেক্সিকো, ব্রিকস ও ন্যাটোকে লক্ষ্য করে বক্তব্য দিলেও ক্যানাডাকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলেননি তাই এখন তার এমন বক্তব্যে অনেকে অবাক হয়েছেন৷ যেমন ব্যাংক অফ মনট্রিয়ালের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডগলাস পোর্টার ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল৷” ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেও ক্যানাডাকে শত্রু হিসেবে দেখার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘… তাই এসব (ট্রাম্পের বক্তব্যসমূহ) আমার কাছে একটু বেশি বিরক্তিকর মনে হচ্ছে৷”
ট্রাম্পের উদ্যোগে ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-ক্যানাডা চুক্তি (ইউএসএমসিএ) কার্যকর হয়েছিল৷ এখন তিনি বলছেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্যসহ এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ক্যানাডা ও মেক্সিকো৷ আগামী বছর এই চুক্তি পর্যালোচনা করার কথা৷
অর্থনীতি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকনোমিক্সের ক্যানাডা ইকনোমিক্সের পরিচালক টনি স্টিলো ডিডাব্লিউকে বলেন, আরও বেশি সুবিধা পেতে নিজের চুক্তিকেও বাতিল করার জন্য পরিচিত ট্রাম্প৷ ‘‘নাফটা (উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) চুক্তির বদলে ইউএসএমসিএ চুক্তি করতে ট্রাম্প সহায়তা করলেও এখন তিনি একে সবচেয়ে খারাপ চুক্তি বলছেন,” বলেন তিনি৷
গতবছরের প্রথম ১১ মাসে ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার৷
যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ক্যানাডা৷ মেক্সিকো, ইউরোপ ও চীনের চেয়েও সেখানে বেশি রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্র৷ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে ট্রাক, ভ্যান, গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও জীবাশ্ম জ্বালানি৷
একইভাবে ক্যানাডার রপ্তানি পণ্যেরও সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র৷ তিন-চতুর্থাংশের বেশি রপ্তানি পণ্যই যায় যুক্তরাষ্ট্রে৷ তুলনার জন্য বলা যায়, জার্মানির মোট রপ্তানি পণ্যের ৫৩ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে৷
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া ক্যানাডীয় পণ্যের এক-চতুর্থাংশ হলো অপরিশোধিত তেল৷ গত জুলাইতে এর পরিমাণ দিনে ৪৩ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন৷ যুক্তরাষ্ট্র এসব তেল পরিশোধিত করে গ্যাসোলিন, ডিজেল ও জেট ফুয়েল তৈরি করে৷ এসব জ্বালানি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছু অংশ ক্যানাডায়ও রপ্তানি করা হয়৷
ক্যানাডার তেলসমৃদ্ধ আলবার্টা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড্যানিয়েল স্মিথ বলেছেন, ট্রাম্প যদি ক্যানাডীয় পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকিকে বাস্তবে পরিণত করেন তাহলে সেটি নিজের পায়ে গুলি করার মতো বিষয় হবে৷ এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রস্তাবিত শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন তেল রিফাইনারদের ক্ষতি করবে এবং ভোক্তাদের পাম্পগুলিতে আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করবে৷”
ক্যানাডার গণমাধ্যম বিএনএন ব্লুমবার্গ অর্থনীতিবিদদের উদ্ধৃত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে ক্যানাডার জিডিপি দুই থেকে চার শতাংশ কমতে পারে, এবং অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হতে পারে৷
যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন পণ্যে শুল্ক আরোপ করা যায় তার তালিকা তৈরি করছে ক্যানাডা৷ ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম আমলেও ক্যানাডার সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ শুরু হয়েছিল৷ এক বছর পর তার সমাধান হয়েছিল৷
ক্যানাডার দৈনিক গ্লোবাল অ্যান্ড মেইল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত, সিরামিক্স, কাচ, ফুল ও ফ্লরিডা কমলা জুসসহ আরও কিছু পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে ক্যানাডা৷ খবর:dw