আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জার্মানির আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনকে ঘিরে অভিবাসী ভোটারদের গুরুত্ব ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এই ভোটাররা নির্বাচনের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

জার্মানিতে প্রায় ৭১ লাখ ভোটার অভিবাসী বা অভিবাসী পরিবারের। এটি মোট ভোটারের আট ভাগের এক ভাগ। তবে এদের মধ্যে ভোট দেয়ার প্রবণতা তুলনামূলক কম এবং তারা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত নন।

জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন রিসার্চের সমাজবিজ্ঞানী ফ্রিডেরিকে রোমারের মতে, অভিবাসী ভোটাররা এখন আর নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার ব্যাপারে আগের মতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নন।

“এদের মধ্যে মধ্যবামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থন সবচেয়ে বেশি। তবে প্রায় ২০ শতাংশ অভিবাসী ভোটার কট্টরডানপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানিকে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু যখন আমরা অভিবাসী ভোটারদের প্রশ্ন করি, কোন দল বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধানে দক্ষতা রাখে? তখন তারা ‘কোনোটিই নয়’ উত্তর বেশি দেয়।”

অভিবাসী ভোটারদের প্রধান উদ্বেগগুলোর মধ্যে রয়েছে: মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবসরকালীন পরিকল্পনা এবং বাসস্থানের সমস্যা। অন্যদিকে, অভিবাসী নন এমন ভোটাররা তুলনামূলকভাবে অপরাধকে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন।

এএফডি অভিবাসী বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত হলেও অভিবাসী ভোটারদের একটি অংশ তাদের সমর্থন করছেন।

রোমার বলেন, “(এএফডি) অভিবাসী শিকড় থাকা নির্দিষ্ট কিছু উপগোষ্ঠীর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে এবং তাদের নিজেদের রাজনীতিতে বিশ্বাসী করতে পারছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল বা তুরস্ক থেকে আসা অভিবাসীরা, তাদের উদ্দেশ্যে তারা বলে: ‘তোমরা সমস্যা নও। নতুন যারা এসেছে, তারাই সমস্যা।’ এই কৌশল খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।”

অতীতে, তুর্কি বংশোদ্ভূত নাগরিকেরা যারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তারা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের প্রধানত সমর্থন করতেন। যদিও এসপিডি এখনও এই গোষ্ঠীর মধ্যে জনপ্রিয়, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সমর্থন কমে গেছে।

এর পরিবর্তে, আরো বেশি সংখ্যক জার্মান-তুর্কি ভোটাররা ভোট দেওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য অভিবাসী গোষ্ঠীর তুলনায়, এই গোষ্ঠীর ভোট প্রদানের হার তুলনামূলকভাবে কম।

ইউনিভার্সিটি অব ডুইসবুর্গ-এসেনের সেন্টার ফর স্টাডিজ অন তুর্কি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন রিসার্চের গবেষক ইউনুস উলুসয় বলেন, “তরুণদের একটি বড় অংশ রয়েছে যারা বৈষম্য অনুভব করছে এবং এটি তাদের মনে এই ধারণা দিয়েছে যে তারা সত্যিই এখানকার নন।”

তিনি বলেন, “এই অনুভূতিটা কষ্টকর এবং এই কষ্ট তরুণদের রাজনীতি থেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে রাখতে পারে এবং এমনকি ভোট না দেয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।”

জার্মানিতে অভিবাসন-পটভূমি থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা জাতিগত জার্মান পুনর্বাসিতরা, যারা সাধারণত ‘লেট রিপ্যাট্রিয়েটস’ নামে পরিচিত।

এই জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগের মাঝেই এক রকমের বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি রয়েছে। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর দ্য হিস্ট্রি অফ ট্রান্সফরমেশনসের ইতিহাসবিদ জ্যানিস পানাজিওটিডিস মনে করেন, ২০২২ সালের শুরুর দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা চালানোর পর জার্মান-রাশিয়ান নাগরিকেরা বিশেষভাবে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবতে শুরু করেন।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এএফডি ‘রাশিয়ান-জার্মানদের দল’ হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করে।

এএফডি তাদের কৌশল তৈরি করেছে কর্তৃত্ববাদী প্রতিশ্রুতি, কঠোর আইন-শৃঙ্খলা নীতি এবং অভিবাসনের প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাবের উপর ভিত্তি করে। পানাজিওটিডিস উল্লেখ করেন, এই ইস্যুগুলো অনেক লেট রিপ্যাট্রিয়েটদের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। এই জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে অভিবাসনের বিরোধিতা করে।

ঐতিহ্যগতভাবে, লেট রিপ্যাট্রিয়েটদের সমর্থন ছিল ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন বা সিডিইউর প্রতি। কিন্তু সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির প্রতি ক্রমবর্ধমান সংশয়ের কারণে এই গোষ্ঠীর মধ্যে সিডিইউর প্রতি আস্থা কমতে থাকে।

এ অবস্থায় সিডিইউ ও তাদের বাভারিয়ান সহযোগী দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন-সিএসইউ পেনশন নীতির মাধ্যমে এই ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে, যা বার্ধক্যজনিত লেট রিপ্যাট্রিয়েটদের কাছে আকর্ষণীয়। খবর: ডিডব্লিউ